ভারতীয় ভিসার জন্য ই-টোকেনের রমরমা ব্যবসা




অসীম বর্মণ এর আগেও অনেকবার ভারতে গিয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি ভারতীয় ভিসা সংগ্রহের জন্য তিনি যেভাবে নাকাল হচ্ছেন সেটি আগে কখনো হয়নি। বর্মণ ভেবেছিলেন পরিবারের ছয়জন সদস্যকে নিয়ে তিনি ভারত ভ্রমণে যাবেন। কিন্তু ভিসার জন্য আবেদন করতে গিয়ে তিনি যে বিড়ম্বনায় পড়েছেন, সেটি তার কাছে ‘অমানবিক’ বলে মনে হয়েছে। 

এর সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, ভিসা আবেদনের জন্য অনলাইনের মাধ্যমে ই-টোকেন সংগ্রহ করা। মি: বর্মণ নিজে বাসার কম্পিউটার থেকে অনলাইনে ই-টোকেন সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সপ্তাহ খানেকে চেষ্টা করেও তিনি সফল হননি। 

এরপর বাধ্য হয়ে তিনি একটি দোকানে গিয়ে প্রতিটি পাসপোর্টের বিপরীতে তিন হাজার দুইশত টাকা দিয়ে ই-টোকেন সংগ্রহ করেন। এই টাকা দেবার তিন দিনের মধ্যে তিনি ভিসা আবেদন জমা দেবার জন্য ডাক পেয়েছেন। তিনি বলেন, এটা সাধারণ পাবলিককে হয়রানি ছাড়া আর কিছুই না। ভারতীয় ভিসা আবেদনের জন্য ই-টোকেন সংগ্রহের নিশ্চয়তা দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক ‘দালালচক্র’ গড়ে উঠেছে। তাদের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে ই-টোকেনের নিশ্চয়তা দেয়া হয়। সাধারণ ভিসা প্রার্থীরা ঘন্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও সার্ভারে ঢুকতে পারেনা। 

অন্যদিকে দালালচক্র অনায়াসে অনলাইনে ফরম পূরণ করে ই-টোকেন সংগ্রহ করেন। সাধারণ ভিসা প্রার্থীরা ই-টোকেনের জন্য সার্ভারে ঢুকতে না পারলেও দালালচক্র কীভাবে এই কাজ করছে সেটি এক বড় প্রশ্ন। ঢাকার ধানমন্ডির একটি মার্কেটে ই-টোকেন জোগাড় করে দেবার কাজ করেন একজন ব্যবসায়ী। অন্য ব্যবসার পাশাপাশি তিনি দোকানে বসেই এ কাজ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সে ব্যক্তি বলেন, আমার কাছে প্রতিদিন ৫-৭জন ই-টোকেনের জন্য আসে। প্রতিটি টোকেনের জন্য আমি ৩২০০ টাকা নিই। সেখান থেকে আমি ১০০-২০০ টাকা করে কমিশন রাখি। আমি যাদের দিয়ে কাজ করাই, বাকি টাকা তাদের কাছে দিয়ে দিই। তিনি বলেন, ই-টোকেন সংগ্রহ করার জন্য কত টাকা দিতে হবে সেটি নির্ভর করে আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি নাকি কম তার উপর।


 এই ব্যক্তি বলেন, ই-টোকেন পাইয়ে দেবার জন্য প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার ‘বাণিজ্য’ হয়। ই-টোকেন বাণিজ্য কয়টি স্তরে কাজ করে এবং সর্বশেষ স্তরটি কোথায় সেটি জানা সম্ভব হয়নি। ঢাকার পল্টনে একজন বলছিলেন তিনি তৃতীয় স্তরে ই-টোকেন বাণিজ্যের কাজ করেন। তার আগে দুটি স্তর এবং পরে আরো তিনটি স্তর আছে বলে তিনি জানান। কিন্তু সবশেষে টাকা কার হাতে পৌঁছায় সেটি তিনি জানেন না। সে ব্যক্তি জানান, কারা এই কাজটা করে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। কিন্তু কোন কূল পাই না। কোথা থেকে এই কাজ হয় কেউ বলে না। ঢাকার ধানমন্ডি এবং গুলশানে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের বাইরে যাদের সাথে কথা হয়েছে তারা সবাই একবাক্যে বলেছেন যে টাকা না দিলে ই-টোকেন সংগ্রহ করা রীতিমতো অসম্ভব। ধানমন্ডিতে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের বাইরে মিজানুর রহমান নামের একজন বলছিলেন , “প্রতিটা লোককে আপনি জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন। অ্যামেরিকার ভিসা পাইতেও এতো হয়রানি হতে হয় না। এটা বলার মতো না।


” গত জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত ভারত সরকারের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে গত বছর দেশটিতে নয় লাখ তের হাজার বিদেশী পর্যটক গিয়েছিল। যার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পর্যটকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এরপরেই বাংলাদেশিদের অবস্থান। অর্থাৎ নয় লাখ তের হাজার পর্যটকের মধ্যে প্রায় ১৯ শতাংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবং বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ১২ শতাংশ। ই-টোকেন সংগ্রহ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের অভিযোগ থাকলেও ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসকে এ বিষয়ে বরাবরই নির্বিকার দেখা গেছে। সাধারণ ভিসা প্রার্থীরা বহু চেষ্টা করেও যখন সার্ভারে ঢুকতে পারছে না, সেখানে দালাল চক্র কীভাবে এই কাজটি করছে?


 ই-টোকেন বাণিজ্যের বিষয়টি ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের নজরে আনা হলে দূতাবাসের তরফ থেকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে যে ভিসার জন্য তাদের কোন এজেন্ট নেই। লিখিত বক্তব্যে ভারতীয় দূতাবাস বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে, আপনি যদি এ ধরনের কোন এজেন্ট/ সাইবার ক্যাফে/ দালাল/ প্রতারকদের সম্পর্কে জানেন, যারা ভারতীয় দূতাবাসের নাম ব্যবহার করে ভিসা পাইয়ে দেবার বিনিময়ে টাকা নিচ্ছে, তাহলে আমরা বিষয়টি পুলিশের কাছে জানানোর জন্য আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন ই-টোকেনের বিনিময়ে দালালচক্রের টাকা হাতিয়ে নেবার বিষয়ে তারা কখনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাননি। মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মারুফ হাসান বলেন, কেউ যদি সুনির্দ্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ করে তাহলে আমরা অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এদিকে ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে তারা ১২ ক্যাটাগরির ভিসা ইস্যু করে। শুধু ভ্রমণ ভিসার আবেদন জমা দেবার জন্য এই ই-টোকেনের প্রয়োজন হয়। বিবিসি 
Share on Google Plus

About Jessica Hornberger

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment