Cheater Story Report Around GAMCA




গুলশান-বনানী সংযোগ সেতু এই সেতুর একপ্রান্তে লাইন ধরে অপেক্ষায় থাকে বেশ কয়েকটি রিকশা কোনো সাধারণ যাত্রী তারা বহন করে না তারা পথচারীদের হাব-ভাব দেখেই বুঝতে পারে যাত্রীর ধরন কিছু কিছু যাত্রীকে দেখেই তারা সরাসরি জিজ্ঞেস করে কোন মেডিকেল পথচারী মেডিকেলের নাম বললেই কাগজ দেখতে চান চালক এরপর কাগজ দেখেই বলেন, আমি চিনি, চলেন নিয়ে যাই


পথচারীও আস্থা পেয়ে ওঠে পড়েন তার রিকশায় কিন্তু এরপর থেকেই শুরু হয় তার ভোগান্তি কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারেন, এরা আসলে রিকশাচালকের ছদ্মবেশে দালাল নির্দিষ্ট কিছু মেডিকেলের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে তারা কিন্তু তখন আর কিছুই করার থাকে না মেডিকেল ছাড়াও ছদ্মবেশী এসব দালাল কাজ করে কিছু নির্দিষ্ট স্টুডিও এবং ফটোকপি দোকানের হয়েও, যা থেকে ছবি তোলা যাবে সে ব্যাপারে পরামর্শ দেন নিজেই নিয়ে যান সেখানে

এসব রিকশাচালকের হাঁকানো ভাড়াও সব সীমা অতিক্রম করে বাধ্য হয়েই সেই ভাড়াও পরিশোধ করতে হয় শুধু এই রাস্তাটিই নয় রিকশা নিয়ে গুলশানের বিভিন্ন মোড়ে ফাঁদ পেতে আছে রিকশা চালকের আড়ালে ছদ্মবেশী এসব দালাল সবচেয়ে বেশি দালাল অবস্থান নেয় গুলশানের ৯৪নং রোডে এই রোডেই অবস্থিত গামকা অফিস প্রতারণার শুরু সেখান থেকেই সরজমিনে গুলশানের গামকা (জিসিসি এপ্রুভড মেডিকেল সেন্টার এসোসিয়েশন) অফিস, তার আশপাশ এবং বিভিন্ন এলাকায় মেডিকেল পরীক্ষা করতে আসা মানুষকে অনুসরণ করে তাদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে প্রতিদিনই প্রতারণার ফাঁদে পড়ছে বিদেশগামীরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে রাজধানী এসে সর্বস্বান্ত হয়ে বাড়ি ফিরছেন অনেকেই



গামকা অফিসের সামনে কথা হয়, ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার ফজলুল হকের সঙ্গে তিনি তার এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে লাখ টাকার বিনিময়ে কুয়েতের ভিসা সংগ্রহ করেছেন মেডিকেল পরীক্ষার জন্য স্লিপ নিতে এসেছেন গুলশানে অবস্থিত গামকা (গালফ এপ্রুভড মেডিকেল সেন্টার এসোসিয়েশন) অফিসে তিনি সকাল ৮টায় লাইনে দাঁড়িয়েছেন দীর্ঘ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর মিলে কাঙ্ক্ষিত মেডিকেল স্লিপটি স্লিপের লেখাগুলো ইংরেজি পড়তে না পারায় খুঁজতে থাকেন পড়ালেখা জানা কাউকে এরই মধ্যে এক রিকশাচালক স্লিপটি দেখে বলেন, গুলশান- নম্বরে আপনার মেডিকেল পড়েছে আমি ওই মেডিকেল চিনি গেলে আমার রিকশায় ওঠেন



ভাড়া কত, কথা বলতেই ঝটপট উত্তর দেন, যা দেয়ার দিয়েন ভাড়া নিয়ে বাজবে না রিকশাচালকের এমন আচরণে খুশি হয়ে ওঠে পড়েন তিনি এরপর কিছু দূর যাওয়ার পর ১০৮ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাসার সামনে রিকশা থামান চালক রিকশাচালক ফজলুর রহমানকে বলেন, মেডিকেল করতে পাসপোর্টের সেট ফটোকপি কপি ছবি লাগবে গলির ভেতরে ফটোকপির দোকান আছে আপনি ফটোকপি করে নিয়ে আসেন আমি এখানে দাঁড়াই রিকশাওয়ালার কথামতো জহির রেস্তরাঁর গলির ভেতর দিয়ে চলে যান ফটোকপির দোকানে ১০ মিনিটের মধ্যেই ওই দোকানদার ছবি ফটোকপি করে ফেলে ৩০০ টাকা দাবি করে দোকানদার



দোকানদারের কথায় আঁতকে ওঠেন ফজলুর প্রশ্ন করেন- এত টাকা ক্যান? বলেন, আমার কাছে এতো টাকা নেই কথা শুনে দোকানদার তাকে গালমন্দ শুরু করে টাকা না দিলে পাসপোর্ট আটকে রাখারও হুমকি দেন এই সুযোগে উধাও রিকশাচালক ফজলুর রহমানের মতো প্রতিদিনই অসংখ্য বিদেশ গমনেচ্ছু মানুষ এভাবেই প্রতারিত হচ্ছেন রিকশাচালকদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্টুডিও ফটোকপির দোকানটি গুলশান- এর ১০৮ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাড়ি এটি টিনশেডের একইদিন কথা হয়, একই ঘটনার শিকার কেরানীগঞ্জের জসিমউদ্দিন, নবাবগঞ্জের রাজিব হোসেন, সাভারের বারেকসহ বেশ কয়েজনের সঙ্গে



রংপুরের অমিত হাসান তিনি কুয়েত যেতে চান ভিসাও পেয়েছেন এখন স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এসেছেন গামকাতে দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে মিলেছে গুলশান- এর অবস্থিত ফেয়ার ওয়েজ মেডিকেল সেন্টার লিমিটেডের স্লিপ স্লিপ নিয়ে হাসিমুখে গামকার দরজা থেকে বের হতেই শুরু হয় রিকশাচালকদের টানাহিঁচড়া একজন রিকসাচালক স্লিপ দেখেই বলেন, আমার রিকশায় আরো একজন আছে তারও মেডিকেল হবে একই জায়গায় একসঙ্গে আপনিও যেতে পারেন সঙ্গী বিদেশ গমনেচ্ছু জেনে ওই রিকশাতেই ওঠেন অমিত



দুজনের মধ্যে নানা কথা হয় একপর্যায়ে সহযাত্রী বলেন, মেডিকেল করতে পাঁচ হাজার টাকা সোনালী ব্যাংকে জমা দিতে হয় আমি জমা দিয়ে স্লিপ নিয়ে এসেছি তার কথা শুনে অমিত বলে আমি টাকা এনেছি কিন্তু ব্যাংকে জমা দেইনি জানতে চান কোথায় জমা দিতে হবে তাকে নিয়ে যাওয়ারও অনুরোধ করেন অমিত বলেন, পরে একসঙ্গে মেডিকেল করবো অমিতের কথা মতো সহযাত্রী যুবক তাকে নিয়ে রওনা দেয় ব্যাংকের উদ্দেশে



কিছুদূর যাওয়ার পর বড় একটি ভবনের সামনে রিকশাওয়ালাকে থামাতে বলে অমিতকে ওই যুবক বলে এই ভবনের পাঁচ তলায় ব্যাংক আছে আপনি টাকা দেন, আমি জমা দিয়ে স্লিপ নিয়ে আসি ওই যুবকের কথামতো অমিত তার কাছে ৫০০০ টাকা দেয় কিন্তু ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করার পরও আর ফিরে আসেনি ওই যুবক অমিতের মতো অহরহ এমন ঘটনার শিকার হচ্ছেন গ্রাম থেকে আসা মানুষেরা স্বপ্নযাত্রার শুরুতেই হোঁচট খাচ্ছেন তারা



সূত্র জানায়, বিদেশগামী সবাইকেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হয় জিসিসি (গালফ করপোরেশন কাউন্সিল) অনুমোদিত মেডিকেলে এজন্য আগে স্লিপ নিতে হয় গুলশানের গামকা অফিস সেন্টার থেকে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গামকার সামনে ভিড় লেগে থাকে বিদেশ গমনেচ্ছুদের আর এই সুযোগে গ্রামের সহজ-সরল লোকজনকে প্রতারিত করার জন্য গামকার সামনে গড়ে উঠেছে ২৫-৩০টি রিকশা দালাল এসব রিকশাচালক যে দালাল প্রতারক হতে পারে তা দেখে বোঝার উপায় নেই



খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব রিকশা চালকের নিয়ন্ত্রণ করা হয় গুলশান- এর ১০৮ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাসার ভেতরের একটি ফটোকপির দোকান থেকে সরজমিনে দেখা যায়, মিথ্যা তথ্য দিয়ে গামকার সামনে থেকে ফটোকপি ছবি তোলার জন্য রিকশাওয়ালারা তাদের নিয়ে এসেছে তাদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা যারা তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে পারছে না তাদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে পাসপোর্ট আটকিয়ে দেয়ার ঘটনাও দেখা গেছে কারো কারো ক্ষেত্রে এই দোকানের পাশেই রয়েছে পুলিশ বক্স ভুক্তভোগীরা তাদের কাছে নালিশ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না



এদিকে, গামকা কর্তৃপক্ষ দালাল রিকশাদালালদের দৌরাত্ম্য হতে সাবধান এমন বিজ্ঞপ্তি সাঁটানোও হয়েছে কিন্তু ব্যাপারে অভিযোগ দিলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে ভুক্তভোগীরা গামকার সামনে থেকে রিকশাচালকদের সরিয়ে দেয়ার দাবি করেন একইসঙ্গে বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকা ছদ্মবেশী রিকশাচালকদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান




ব্যপারে গামকার জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. লাহুয়ার রহমান হয়রানির কথা স্বীকার করে বলেন, আমি ওই ফটোকপির দোকানে গিয়ে অনেক শাসিয়েছি এরপরও তারা এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে এসব বন্ধে পুলিশের অভিযান প্রয়োজন তবে গামকার ভেতরে দালালরা আসতে পারে না গেটের সামনে থেকে মানুষকে হয়রানি করে এই কর্মকর্তা বলেন, বহু চেষ্টা করেও তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না গামকার সামনে থেকে রিকশাগুলো কেন সরিয়ে দেয়া হচ্ছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে মো. লাহুয়ার রহমান বলেন, থানা পুলিশকে বলেছিলাম কিন্তু তারা জানিয়েছে, ব্যাপারে থানা পুলিশের কোনো এখতিয়ার নেই
Share on Google Plus

About Jessica Hornberger

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment