সাজেক! সাজেক! সাজেক! হালের ক্রেজ সাজেক।ঘুরাঘুরির জন্য সবার পছন্দের তালিকার শীর্ষে এখন সাজেকের স্থান। অথচ এই সাজেকেই আমার যাওয়া হয় নাই। তাই গত ২১ আগস্ট,২০১৬ তারিখ যাওয়ার সুযোগ পাওয়া মাত্র সেটা লুফে নিলাম।
২১ তারিখ রাতের বাসে করে যাবো দিঘীনালা। দিঘীনালা থেকে সেই কাঙ্ক্ষিত সাজেক। ২১ তারিখ সারাদিন অনেক বৃষ্টি হওয়ায় কলাবাগান থেকে রাত ৯ টার বাস ছাড়তে ছাড়তে ১০ টা বেজে গেল।
সারাদিন ঘুম ঘুম চোখ থাকলেও বাসে উঠার পর ঘুম চলে গেল। বন্ধুদের সাথে হাসি-ঠাট্টা, মোবাইলে গান শুনতে শুনতে সময় পার হয়ে যাচ্ছিলো। আমরা ছিলাম ১৪ জন। আমরা বাদে বাসে আর ১০ জন যাত্রী ছিলো। তো বলতে গেলে আমাদের রিজার্ভ করা বাসের মতই অবস্থা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড চার লেন হওয়ার পর জ্যাম এখন পরে না বললেই চলে। আমি পাই নাই এখন পর্যন্ত। গাড়ি বেশ ভালো গতিতেই চলছিলো। রাত দুটার দিকে খাবার জন্য বিরতি দেওয়া হলো। খাওয়া দাওয়া করে বাসে বসে ঝিমানোর মত লাগছিলো তখন দেখলাম বাস চট্টগ্রাম রুট ছেড়ে ফেনীর বারোইহাটি নামক জায়গায় এসে বামে ঢুকে গেল। বেশ আগ্রহ নিয়ে নড়েচড়ে বসলাম। কিছুক্ষন পর আবার ঘুম পেয়ে বসলো।
হঠাৎ টের পেলাম বাস পাহাড়ী রাস্তায় যেভাবে টার্ন নিয়ে নিয়ে চলে সেভাবে চলছে। ঘুম ভেঙে গেল। ঘটনা কি বুঝতে সামনে চলে গেলাম। জানতে পারলাম এই রাস্তা শুধু শান্তি ও ইকোনো পরিবহনই নাকি ব্যবহার করে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি পাহাড়ী রাস্তা কোথা থেকে এলো সেই রহস্যর কোন উত্তর পেলাম না। চোখ থেকে ঘুম চলে গেল। দাঁড়িয়ে থেকে কিছুক্ষন দেখার চেষ্টা করলাম কিন্তু এত টার্ন দাঁড়িয়ে থাকা মুশকিল। জায়গা না পেয়ে এর পর চলে গেলাম একেবারে পিছনের সিটে। পাচঁ সিটের মাঝ বরাবর বসে সামনে তাকিয়ে মনে হচ্ছিলো রোলার কোস্টারে আছি। অনেকক্ষন পর ড্রাইভারের পিছনে ছোট বসার জায়গা খালি হলো। এরপর বাকি পথ সেখানে বসেই আসলাম। বাস জার্নির এইটাই বেস্ট পার্ট।
ভোরবেলা দিঘীনালা যখন নামলাম। তখন চারিদিকে কুয়াশা। শীত শীত করতে লাগলো। আগে থেকেই ঠিক করে রাখা জীপ ড্রাইভার আমাদের বনবিহারের গেট থেকে রিসিভ করলো।
প্রথমে গেলাম দিঘীনালা বাসষ্ট্যান্ড নাস্তা করার জন্য। নাস্তা করার পর কিছুক্ষন এদিক সেদিক ঘুরে এরপর গেলাম হাজাছড়া ঝর্ণা। দিঘীনালা বাসষ্ট্যান্ড থেকে ২০ মিনিটের মত লাগে যেতে। বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্পের একটু আগেই রাস্তার পাশে জীপ থেকে নামিয়ে দেয়। এরপর ঝিরি ধরে ১০-১৫ মিনিট হাঁটলেই ঝর্ণার দেখা পাওয়া যায়। তেমন পাহাড়ী পথ না থাকায় সবাই যেতে পারে।
শেষ কবে ঝিরি পথে হেঁটেছি মনে নেই। তাই ঝিরি পথ দেখেই মন খুশিতে ভরে গেল। আমাদের সাথে পিচ্চি এক ছেলে ছিলো জীপের হেল্পার তাকে জিজ্ঞাসা করলাম ঝিরি পথ দিয়ে হেঁটে ঝর্নায় যাওয়া যাবে না? বললো যাবে কিন্তু সময় বেশি লাগবে। আমরা তাই শর্টকাটে আগাচ্ছিলাম।
বেশ দূরে থাকতেই হঠাৎ পানি পড়ার শব্দ শুনতে পেলাম। গতি বেড়ে গেল কিছুটা। গাছ দিয়ে ঢাকা একটা মোড় পেরোতেই দেখা পেলাম হাজাছড়া ঝর্ণার। অনেক উঁচু থেকে পানি পড়ায় এত শব্দ হচ্ছে। আর বৃষ্টি হওয়ায় পানিও ছিলো অনেক বেশি। এই ঝর্নারই আরেকটা নাম আছে "শুকনাছড়া ঝর্ণা।" তবে বর্ষাকালে এই নামে ডাকলে ঝর্ণা রাগও করতে পারে।
ঝর্নার কাছে গিয়েই দেখা পেলাম রংধনুর। এযেন বোনাসের উপর বোনাস। হিমশীতল ঠান্ডা পানি দেখে নিজেকে আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। সাথের কেউ পানিতে নামতে না চাইলে আমি একাই নেমে পড়লাম। এইখানে গোসল করা মিস করা যায় না।
হাজাছড়া ঝর্নার উপরেও যাওয়া যায়। কিন্তু যাওয়ার পথটা বেশ রিস্কি। উঠা হয়ত যাবে কিন্তু নামার সময় ধরার কিছু থাকে না। এইখান থেকে নাকি বেশ কয়েকটা দুর্ঘটনাও হয়েছে।
ঝর্ণা দেখা শেষে আবার জীপের কাছে চলে আসলাম। এখন অপেক্ষার পালা। ১০.৩০টার এসকোর্টে আর্মিদের সাথে যেতে হবে। আগে সাজেকে নিজের ইচ্ছামত জীপ ভাড়া করে যাওয়া গেলেও শান্তি বাহিনীর লোকরা বিগ্রেডিয়ারের জীপে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার পর এখন আর যাওয়া যায় না। সব গাড়ি একসাথে আর্মিরা এসকোর্ট করে নিয়ে যায়। এইজন্য সবগাড়ি আসার অপেক্ষা করতে হয়। খুব বেশি ভীড় যেদিন হয় সেদিন নাকি প্রায় ২০০টা পর্যন্ত জীপ একসাথে সাজেক যায়!
বাঘাইহাটের রাস্তার সাথে একটা দোকান আছে আমরা সেখানে বসে অপেক্ষা করতে থাকলাম। টুকটাক এটা সেটা খেয়ে ১০টার দিকে আর্মি ক্যাম্পে গেলাম। সেখানে সই করতে হয়। সই করে চলে গেলাম বাজারে। যেখান থেকে সব জীপ একসাথে ছাড়বে। বাজারে আবার অপেক্ষার পালা। বাজারে পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, ছোলার দোকান দেখে সবাই হামলে পড়লাম। ১ টাকা পিস পেঁয়াজু আর ৩ টাকা পিস চপ,বেগুনি খেয়ে পেট ভরে ফেললাম। এরপর চোখ পড়লো ডাবের দিকে। ৪০ টাকা দিয়ে ডাব কিনলাম নাকি পানি কিনলাম বুঝলাম না। একটুও মিষ্টি না!
আর্মির এসকোর্ট গাড়ি আসলে সিরিয়াল ধরে সব জীপ চলা শুরু করলো। আমাদের কয়েকজন জীপের ছাদে বসলো। সাজেকে জীপের ছাদে না বসলে নাকি সেই মিস। এই কথা জানার পরও বসলাম না। অনেক রোদ আর ঘুম ঘুম পাচ্ছিলো। পাহাড়ী আঁকাবাঁকা রাস্তা আমার জন্য নতুন কিছু না। তাই জীপের ভিতর বসেই কিছুক্ষনের ভিতর ঘুম চলে আসলো।
অনেকক্ষন ধরে হাতের উপর ভর দিয়ে শুয়ে থাকায় হাতের ব্যাথায় ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ভাঙার পর আশেপাশের রাস্তার দিকে তাকাচ্ছি তখনই ঘটলো অঘটন। হঠাৎ করেই খাড়া একটা ঢালে গাড়ির গিয়ার আটকে গেল। এই জীপগুলোর ব্রেক মারাত্মক। সাথে সাথে ব্রেক করায় জীপ নিচের দিকে নামলো না। আর আমাদের ভাগ্য ভালো ছিলো যে আমাদের ঠিক পিছনেই আরেকটা জীপ ছিলো। সেটা থেকে জ্যাম এনে চাকায় দিয়ে দিলো। এখন আর জীপ ব্রেক না করলেও পড়বে না। হঠাৎ এই ঘটনায় হৃৎপিন্ড যেন বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। এরপর ড্রাইভার বললো কয়েকজনকে নামতে। তখন একেবারে খাড়া ঢালে থাকায় নামতে গিয়ে এক বন্ধু প্রায় পরে যায় এমন দশা। সাবধানে কেন নামে নাই এইজন্য ওকে বকা দিয়ে আমিও নামতে গিয়ে দেখি টাল সামলানো আসলেই কঠিন। ড্রাইভার কিছুক্ষনের মধ্যেই গিয়ার ঠিক করে ফেললো। আবার গাড়ি চলতে শুরু করলো। তখন বার বার বলতেছিলো তার পাঁচ বছর হলো এই লাইনে ড্রাইভ করে কখনো এমন হয় নাই!
এত ভয়ের মধ্যেও হাসি লাগলো যখন দেখলাম আমাদের জীপকে ওভারটেক করে গেল অকটেন চালিত সিএনজি। মাত্র ঠিক হওয়ায় তখনও স্পিড পাচ্ছিলো না। কিছুক্ষন পরেই অবশ্য আমদের জীপ সেটাকে ওভারটেক করলো। স্বস্তি নিয়ে নড়েচড়ে বসা মাত্রই জীপের এক্সটা টায়ার যেটা গ্রিলের সাথে বাঁধা ছিলো বিকট শব্দে পাংচার হলো। এইবার মনে হলো যেন আত্মা বেরই হয়ে যাবে! বাকি রাস্তা আমার বেশ ভয়েই কাটলো। খাড়া ঢাল দেখলেই ভয় ভয় লাগতেছিলো।
যাই হোক অবশেষে আমাদের থাকার জায়গা মারুয়াতি কটেজে চলে আসলাম। এটা রুইলুই পাড়ায় অবস্থিত। কটেজ দেখে আমাদের তো মাথা নষ্ট। দোতলা কটেজ পুরোটাই আমাদের। উপরে তিনটা রুম আর নিচতলায় ২ টা রুম। উপরে কোনার রুম থেকে ভিউও অনেক জোস। এই রুমে শুয়েই সূর্যোদয় দেখা যাবে!
রুমে ব্যাগ রেখে আমরা রিসোর্টের মালিককে ধরলাম আশেপাশে কোন পুকুর(!) বা ঝর্ণা আছে নাকি গোসল করার জন্য। যদিও কটেজের প্রতিটা রুমে এটাচাড বাথ তবে পাহাড়ে এসে কে কলের পানিতে গোসল করতে চায়! উনি জানালেন ঝর্ণা একটা আছে কিন্তু সেটা ২-২.৩০ ঘন্টার পথ। আমরা হতাশ হতেই বললেন কিন্তু কুয়া আছে। যেটার পানি অনেক ঠান্ডা। আর যেতে পাচঁ মিনিটের মত লাগবে। আমরা তো মহাখুশি। সবাই উনার পিছে পিছে হাঁটা ধরলাম। কিন্তু একি পাঁচ মিনিটের পথ বললেও পথ তো শেষ হয় না। তারউপর সাজেকে অনেক গরম। গোসল করে আবার হোটেলে আসতে আসতে আরেকদফা গোসল হয়ে যাবে। আমাদের সাথে আসা এক বন্ধু অর্ধেক পথ এসে ফিরে গেল। কিন্তু আমরা যেতে থাকলাম। দেখি কি আছে। বেশ কিছুক্ষন পিচঢালা রাস্তায় হাঁটার পর এরপর রাস্তার পাশের মাটির রাস্তায় চলে গেলাম। আরো কিছুক্ষন হাঁটার ঢালু রাস্তা পেরিয়ে অবশেষে সেই কুয়ার সন্ধান পেলাম। কুয়ার পানি দেখে তো আমরা সেই খুশি। পানির রঙটাই কেমন আকাশী নীল। এতক্ষন ধরে হেঁটে আসাটা সার্থক!
ঝর্ণার পানি থেকে এই কুয়ার সৃষ্টি। খাওয়া ও গোসল দুই কাজে ব্যবহার করা হয় এই পানি। এজন্য দুইটা কুয়া আছে। খাওয়ার পানি নেওয়ার কুয়াটা অগভীর ছোট। আর গোসলের কুয়াটা বেশ গভীর। আমরা মনের ইচ্ছা মত গোসল করলাম। অসম্ভব ঠান্ডা পানি। তবে এক মগ পানি গায়ে ঢালতেই শরীরের সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। গোসল করে আবার কটেজের পথ ধরলাম। যাওয়ার সময় শুধু নামা পথ থাকলেও উঠার সময় কিছুটা ঢাল পার হতে হয়। তবে ওই পানিতে গোসল করার জন্য এতটুকু কষ্ট মেনে নেওয়াই যায়।
গোসল শেষে এবার গেলাম মারুয়াতী দিদির হোটেল। আমরা বসতেই গরম গরম ভাত, মুরগি, পাহাড়ী সবজি আর ডাল চলে আসলো। মুরগির তরকারীতে সে কি ঝাল। আমি ঝাল অনেক বেশি খাই দেখে আমার কাছে অনেক মজাই লাগলো তবে বাকিদের খেতে বেশ কষ্টই হলো। কিন্তু খাবারটা অনেক মজার ছিলো। গোসল শেষ, খাওয়া শেষ এবার লম্বা ঘুম দেবার পালা। সাজেকে যেহেতু দুই রাত থাকবো তাই সূর্যাস্ত পরেরদিন দেখা যাবে এই চিন্তা করে লম্বা এক ঘুম দিলাম।
ঘুম থেকে উঠে বের হলাম সাজেক দর্শনে। সাজেকের প্রথম পাড়া রুইলুই পাড়ার উচ্চতা ১৮০০ ফুট। আমাদের কটেজও এই রুইলুই পাড়াতেই। কটেজের অপজিটেই বিশাল এক গাছ সেই গাছের নিচে বসার ব্যবস্থা আছে। সেখানে বসে কিছুক্ষন হাওয়া বাতাস খেয়ে বের হলাম চায়ের সন্ধানে। চা খেয়ে এবার বের হলাম হেলিপ্যাডে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। সাজেকের রাস্তায় স্ট্রিট লাইট রয়েছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় নেই। সেখানেই মজা। অন্ধকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালে দেখা পাওয়া যায় অসংখ্য তারার। আকাশ খুব পরিষ্কার থাকলে দেখে মিলে মিল্কিওয়ের!
হেলিপ্যাড-২ রুন্ময় রিসোর্ট থেকে একটু সামনে। আমাদের কটেজ থেকে ১ কিলোর পথ। রাতের আকাশ দেখতে দেখতে আমরা চলে আসলাম হেলিপ্যাডে। ঢাল পেরিয়ে হেলিপ্যাডে উঠে আমরা তো থ! আকাশে বিশাল এক চাঁদ এবং সেই চাঁদের আলোয় পুরো হেলিপ্যাড আলোকিত। সিরিয়াল ধরে সবাই বসে পড়লাম। এখন হবে চন্দ্রস্নান!
রাতের খাবার খেয়ে বের না হওয়ায় বেশি থাকা গেল না। হোটেলে গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে আর হেলিপ্যাডে যাওয়ার শক্তি না থাকায় সবাই কটেজে চলে আসলাম। কটেজের বারান্দা থেকে চাঁদের আলো দেখে ভ্রম হচ্ছিলো। আর সেই ভ্রমে আমি হারিয়ে যাচ্ছিলাম। গল্প, আড্ডা-গান দিয়ে শেষ হলো সাজেকের প্রথম রাত।
এল্যার্মের শব্দে ভোর ৪.৩০টায় ঘুম ভাঙলে রুমে বসে কয়েকটা ছবি তুলে আবার শুয়ে পড়লাম। চোখ জুড়ে শুধু ঘুম। সকালে উঠে সবাই যখন নাস্তা করতে গেল আমি তখন বের হলাম সাজেক ভ্রমণে। হেঁটে হেঁটে চলে গেলাম সাজেক ০ কি.মি. লেখা মাইল ফলকের কাছে। সেখানে ছবি তুললাম, ঘুরাঘুরি করলাম। সাজেকে অনেক কিছুই আছে। দোলনা, তীর নিক্ষেপ, বসার সুন্দর ব্যবস্থা, পিকনিক স্পট। এ জন্যই সাজেক এত জনপ্রিয়!
ফিরতি আসার পথে বিজিবির ক্যাম্প দেখে সেখানে গেলাম। গার্ডরত দুই বিজিবির সাথে বেশ কিছুক্ষন গল্প করলাম। জানতে পারলাম দূরে সবচেয়ে বড় যে পাহাড় যার আড়াল থেকে সূর্যি মামা বের হয় তার নাম "লুসাই পাহাড়" । এই পাহাড়টা ভারতের। আর বাংলাদেশ-ভারতের যে বর্ডার সেটার নাম মিজোরাম বর্ডার। রাতে লক্ষ্য করলে নাকি দূরে ভারত বর্ডার ক্যাম্পের আলো দেখতে পাওয়া যায়। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যে পতাকা বৈঠক হয় সেখানে যেতে সাজেক থেকে ১ দিন সময় লাগে। একটা পতাকা বৈঠক শেষ করে আবার সাজেক আসতে সময় লাগে তিনদিন। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে সেখানে যেতে হয়।
কংলাক পাড়ায় যেতে হয় ভোরে কিন্তু আমাদের কয়েকজনের সকালে কিছু কাজ থাকায় আমরা ভোরে যেতে পারি নি। নাস্তার পর আমরা বের হলাম কংলাক যাওয়ার জন্য। হাঁটা পথে কংলাক যেতে সময় লাগে ৪৫ মিনিটের মত। তবে আমরা জীপ নিয়ে কংলাক যাওয়ার পথে এক খাড়া ঢালের মত জায়গায় নামলাম। এখান থেকে সময় লাগে মাত্র ১০ মিনিট। লম্বা ঢালু একটা পথ উঠতেই দেখা পেলাম ছোট একটা পাড়ার। এটার নামই কংলাক পাড়া।
কংলাক পাড়া সাজেকের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় সিপ্পু পাহাড়ে অবস্থিত। সিপ্পু পাহাড় সাজেক তো বটেই পুরো রাঙামাটি জেলার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। সিপ্পু পাহাড়ের উচ্চতা ২৮০০ ফুট। সিপ্পু পাহাড়ের চূড়া থেকে পুরো সাজেকের ৩৬০ ভিউ পাওয়া যায়। কংলাক পাড়ায় পাংখোদের বসবাস। এপাড়ার অনেকে বাংলায় কথা বলতে না পারলে ইংরেজিতে বেশ দক্ষ। আমাদের সাথেই একজন ইংরেজি বেশ স্বতর্ফূত কথা বলছিলো। কংলাক পাড়া থেকে ভারতের মিজোরাম রাজ্য বেশ কাছে। হাঁটা পথে ২ ঘন্টার পথ। তাই অনেকেই ভারতের মিজোরাম রাজ্যে গিয়ে পড়াশুনা করে। পাংখোরা এমনিতে বেশ আধুনিক অনান্য আদিবাসিদের থেকে।
কংলাক পাড়ায় রয়েছে সুস্বাদু লাল পেয়ারা, কলা, জাম্বুরা। আমরা খাবারে উপর ঝাপিয়ে পড়লাম। পাহাড়ী মরিচের কথা না বললেই নয়। এত ঝাল বলার বাইরে। খেয়ে দেয়ে এরপর চূড়ায় গেলাম। ছবি তুলে এরপর গেলাম রক কটেজের কাছে। কটেজটা বেশ পছন্দ হয়েছে। তবে আর্মিরা এখানে থাকতে না করে দিয়েছে। তাদের এখানে ক্যাম্প না থাকায় এই জায়গায় থাকাটা নিরাপদ না। তবে পরিবেশের কথা চিন্তা করলে। ১০০ তে ১৫০ একটা জায়গা। আশেপাশে আর কিছু নেই। নাম না জানা এক পোকার এক টানা ঝি ঝি শব্দ। একেবারে RAW ফিলিংস!
সাজেক আমার কাছে অনেক কমার্শিয়াল মনে হয়েছে। প্রায় সব কটেজ, রিসোর্টগুলোই এটাচ বাথ তৈরি করে রুমের ভাড়া বেশি নেয়। এমনিতে আর্মিদের কল্যানে সাজেকের পরিবেশ অত্যন্ত চমৎকার। সব জায়গা পরিষ্কার। পরিষ্কার, প্রশস্ত ফুটপাত। তবে এত কৃত্রিমতা আমার কাছে ভালো লাগে নাই। পাহাড় হবে পাহাড়ের মত। যেখানে একটু কষ্ট করতে হবে। এত বিলাসিতা থাকবে না। তবে একদিক দিয়ে ভালো হয়েছে এই যে এখানে অনেক কম খরচে থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। পাহাড়, মেঘ দেখার শখ সবার পূরন হবে এখন।
সাজেকের রাস্তায় হাঁটলে মনে হবে যেন কোন এক গ্রামের রাস্তায় হাঁটতেছি। যেই গ্রামের রাস্তাগুলো পিচঢালা। দুইপাশে তাকিয়ে পাহাড় দেখলে তখন সম্ভিত ফিরে আসে। মনে হয় না আমি পাহাড়ে আছি। সাজেকের মানুষজন খুব ভালো।
সাজেক গিয়ে আমার যেটা মনে হয়েছে,
সাজেকের দুঃখ হলো "লুসাই পাহাড়"। সাজেকের দুই পাশে রাস্তায় তাকালে যেদিক দিয়ে সূর্যোদয় হয় সেপাশে দেখা যাবে ছোট ছোট অনেক পাহাড়ের পরে দূরে বিশাল এক পাহাড়, এটাই লুসাই পাহাড়। যেই লুসাই পাহাড় থেকে কর্ণফুলী নদীর সৃষ্টি হয়েছে। যেদিকে যত দূরেই যান এই পাহাড় আপনাকে অনুসরন করবে। কিন্তু পাহাড়টি আমাদের না, ভারতের। এর চেয়ে বড় দুঃখ আর কি হতে পারে!
***************সাজেকে দেখার যা যা আছে***************
i)রুইলুই পাড়া
ii)মেঘমাচাং কটেজ (না থাকলেও গিয়ে দেখা উচিত)
iii)সাজেক ভ্যালি রিসোর্ট (না থাকলেও গিয়ে দেখা উচিত)
iv)স্টোন গার্ডেন (সাজেক ভ্যালি রিসোর্টের পাশে, ২০ টাকা টিকেট)
v)রুইলুই পাড়া থেকে সাজেক হাঁটাহাঁটি করা (রাস্তার ফুটপাতগুলো অসাধারন)
vi)হেলিপ্যাড-১ এ বসে সূর্যাস্ত দেখা
vii)হেলিপ্যাড-২ এ বসে সূর্যোদয় দেখা
viii)কংলাক পাড়া ঘুরা (সাজেক থেকে হেঁটে যেতে ৪৫ মিনিট লাগে, ভোর বেলা যাওয়া ভালো)
ix)কংলাক পাড়ার চূড়ায় বসে সূর্যোদয় দেখা
x)হেলিপ্যাড-২ এর পাশের দোলনায় দোল খাওয়া
xi)ঝাড়ভোজ পিকনিক স্পটে যাওয়া (২০ টাকা টিকেট)
xii)রুন্ময় রিসোর্ট (না থাকলেও গিয়ে দেখা উচিত)
xiii)হেলিপ্যাডে বসে রাতের আকাশ উপভোগ করা
xiv)খুব ভোরে মেঘের চাদরে ঢাকা পাহাড় দেখা
xv)কমলক ঝর্ণা (হেঁটে যেতে ২-২.৫ ঘন্টা লাগে, রুইলুই পাড়া থেকে গাইড ৩০০-৩৫০ নিবে)
xvi)রুইলুই পাড়ার কুয়াতে গোসল করা
***************খাগড়াছড়িতে দেখার যা যা আছে***************
i)রিসাং ঝর্ণা
ii)আলুটিলা গুহা
iii)সিস্টেম রেস্তোরা
iv)পর্যটন মোটেল
***************দিঘীনালাতে দেখার যা যা আছে***************
i)হাজাছড়া ঝর্ণা
ii)ঝুলন্ত ব্রিজ
iii)দিঘীনালা বনবিহার
iv)তৈদুছড়া ঝর্ণা
v)সিজুক ঝর্ণা
***************সাজেক যাওয়ার উপায়***************
সাজেক দুইভাবে যাওয়া যায়। খাগড়াছড়ি থেকে জীপ ভাড়া করে অথবা দিঘীনালা থেকে জীপ ভাড়া করে।
প্ল্যান -১ঃ
রাতের বাসে খাগড়াছড়ি গিয়ে জীপ ভাড়া করে রিসাং, আলুটিলা গুহা দেখে, দুপুরে খাগড়াছড়ির বিখ্যার "সিস্টেম রেস্তোরা"য় খেয়ে ৩ টার এসকোর্টে সাজেক যাওয়া। সাজেকে যতদিন ইচ্ছা থেকে ফিরত আসার দিন সকাল ১০.৩০ টার এসকোর্টে রওনা হয়ে হাজাছড়া ঝর্ণা ঘুরে খাগড়াছড়ি/দিঘীনালা থেকে ঢাকার বাসে উঠা।
প্ল্যান-২ঃ
রাতের বাসে দিঘীনালা গিয়ে হাজাছড়া ঝর্ণা দেখে সকাল ১০.৩০টার এসকোর্টে সাজেক যাওয়া। সাজেকে যতদিন ইচ্ছা থেকে ফিরত আসার দিন ৩ টার এসকোর্টে খাগড়াছড়ি আসা। খাগড়াছড়ি সে রাতে থেকে পরের দিন খাগড়াছড়ির সব স্থান দেখা। সেদিন রাতের বাসে ঢাকায় ব্যাক করা।
প্ল্যান-৩ঃ
ট্রেকিং এর অভ্যাস থাকলে দিঘীনালাতে একদিন বেশি থেকে তৈদুছড়া ঝর্ণা ঘুরে আসতে পারেন। অথবা খাগড়াছড়ির সীমানা পাড়া দিয়েও তৈদুছড়া ঝর্ণায় যাওয়া যায়। এই পথে সময় কম লাগে। এছাড়া বাকিসব প্ল্যান-১,২ এর মতই।
***************যাতায়াত খরচ***************
ঢাকা-খাগড়াছড়ি - ৫২০ টাকা (হানিফ,শ্যামলীসহ অনেক বাস যায়)
ঢাকা-দিঘীনালা - ৫৮০ টাকা (শুধু শান্তি পরিবহণ যায়)
খাগড়াছড়ি-দিঘীনালা বাসে - ৪৫ টাকা
খাগড়াছড়ির রিসাং,গুহা দেখার জন্য জীপ ভাড়া - ১৫০০/২০০০ টাকা
জীপে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক - ৯০০০+ (সাজেক থাকবেন, আশেপাশে স্পট ঘুরবেন)
জীপে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক - ৫০০০+ (দিনে দিনে চলে আসলে)
জীপে দিঘীনালা থেকে সাজেক - ৭০০০+ (সাজেক থাকবেন)
জীপে দিঘীনালা থেকে সাজেক - ৪০০০+ (দিনে দিনে চলে আসলে)
সিএনজিতে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক - ৩০০০+
বাইকে দিঘীনালা থেকে সাজেক - ৬০০-১২০০
রুইলুই পাড়ায় প্রবেশের সময় জীপ প্রবেশ ফি - ১০০ টাকা
রুইলুই পাড়ায় প্রবেশের সময় প্রতিজন প্রবেশ ফি - ২০ টাকা
পাহাড়ী রাস্তা হওয়ায় আমার সাজেশন থাকবে বাইক বা সিএনজিতে না গিয়ে জীপ গাড়ি দিয়ে যাওয়ার। আর যেভাবেই যান না কেন দামাদামি করবেন। কোন ফিক্সড ভাড়া এই পথে নেই।
এমনিতে সাজেকে যাওয়ার জীপ খাগড়াছড়ি/দিঘীনালাতে গিয়েই পাওয়া যায়। তবে ছুটির দিনে গেলে অনেক ভীড় থাকে তখন পাওয়া নাও যেতে পারে বা পেলেও ভাড়া বেশি চাইতে পারে। তাই আগে থেকে ঠিক করে যাওয়াই ভালো।
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যেতে সময় লাগে ৩ ঘন্টার মত আর দিঘীনালা থেকে ২.৩০ ঘন্টা।
দীঘিনালার চাঁদের গাড়ির ড্রাইভার শিবু- ০১৮২০৭৪৬৭৪৪।
*খাগড়াছড়ি থেকে এখন জীপ সমিতি থেকে ফ্রিক্সড প্রাইসে জীপ নিতে হয়।
*খরচের কিছু কিছু তথ্য Shaheen Kamal ভাইয়ের নোট থেকে নেওয়া।
***************খাবার খরচ***************
খাবার খরচ আইটেমভেদে ১০০-১৮০ এর মধ্যেই হয়ে যাবে।
ভাত,ডাল,দেশি মুরগি, সবজি - ১৮০ টাকা
রক ক্যান্টিনে, বারবিকিউঃ ১ পিস মুরগি - ২৫০ টাকা, পরোটা - ১০ টাকা
পাহাড়ী হোটেলে, বারবিকিউঃ ১ পিস মুরগি - ২০০ টাকা, পরোটা - ১০ টাকা
সেনাবাহিনী পরিচালিত ক্যান্টিন হচ্ছে রক ক্যান্টিন। ওদের খাবারের দাম অন্য সব জায়গা থেকে অনেক বেশি।
সাজেকে খাবার রান্না করা থাকে না। যাই খাবেন, যখনই খাবেন আগে থেকে খাবার অর্ডার করে রাখতে হবে। সাজেক যাওয়ার সময় যেখানে থাকবেন তাদের বললে অথবা জীপ ড্রাইভারকে বললে খাবারের ব্যবস্থা করে রাখবে। সাজেকে সবকিছুই পাওয়া যায় তবে দাম একটু বেশি।
***************থাকার ব্যবস্থা***************
সাজেকে থাকার অনেক রিসোর্ট, আদিবাসিদের বাসা রয়েছে।
আর্মিদের দুইটা রিসোর্ট আছেঃ
i)রুইলুই পাড়ায়, সাজেক রিসোর্টঃ
সাজেক রিসোর্টের দ্বিতীয় তলায় চারটি কক্ষ আছে। ভি আই পি কক্ষ ১৫,০০০ টাকা। অন্যটি ১২,০০০ টাকা। অপর দুইটি ১০,০০০ টাকা করে প্রতিটি। খাবারের ব্যবস্থা আছে। যোগাযোগ : খাগড়াছড়ি সেনানিবাসের গিরি থেবার মাধ্যমে বুকিং দিতে হবে। যার নম্বর : ০১৮৫৯০২৫৬৯৪। আরেকটি নম্বর : ০১৮৪৭০৭০৩৯৫।
ii)সাজেকে, রুন্ময় রিসোর্টঃ
রুন্ময়ের নীচ তলায় তিনটি কক্ষ আছে। প্রতিটির ভাড়া ৪৪৫০ টাকা। প্রতিটি কক্ষে ২ জন থাকতে পারবেন। ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। উপরের তলায় দুইটি কক্ষ আছে ভাড়া ৪৯৫০ টাকা। প্রতিটি কক্ষে দুই জন থাকতে পারবেন। এটাতেও ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। চারটি তাবু আছে প্রতি তাবুতে ২৮৫০ টাকা দিয়ে চার জন থাকতে পারবেন। যোগাযোগ : ০১৮৬২০১১৮৫২।
মেঘমাচাংঃ
সাজেকে থাকার অন্যতম বেস্ট জায়গা হচ্ছে মেঘমাচাং। মেঘের উপরই মেঘমাচাং। এ যেন মেঘের উপর বাড়ি। এদের তিনটা কটেজ আছে। ভাড়া প্রতিরুম ২৫০০-৩০০০ টাকা। প্রতি রুমে ৬ জন করে থাকতে পারে। ভীড় কম থাকলে এক এক রুমে ৮-১০ জনও থাকতে দেয় তবে সেটা সবসময় না। ফোনঃ ০১৮২২১৬৮৮৭৭
জুমঘরঃ
সাজেকে আগে শুধু মেঘমাচাং থেকেই মেঘের ভেলায় ভাসা গেলেও এখন জুমঘর নামক আরেকটি রিসোর্ট হয়েছে। বুকিং এবং বিস্তারিতঃ বুকিং এবং বিস্তারিত - 01884208060
মেঘপুঞ্জিঃ
মেঘের ভেলায় থাকার জন্য এটাও ভালো একটি রিসোর্ট। এদের চারটি কটেজ আছে। ভাড়া ২৫০০-৩০০০ টাকা।
যোগাযোগঃ 01911722007, 01815761065
সাইটঃ http://www.meghpunji.com/
রুইলুই পাড়া ক্লাব হাউজ :
এটি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়াতে অবস্থিত। এখানে ১৫ জনের মত থাকতে পারবেন। ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ টাকা করে দিতে হবে। নিজেরা রান্না করে খেতে পারবেন। এর কেয়ার টেকার মইয়া লুসাই দাদা সব ব্যবস্থা করে দিবে। লক্ষন নামেও একজন আছে, প্রয়োজনে আপনাদের সহযোগীতা করবে। এখানে দুইটি টয়লেট আছে। একটি ফ্রি ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যটির জন্য ২০০ টাকা প্রদান করতে হবে। যোগাযোগ : মইয়া লুসাই - ০১৮৩৮৪৯৭৬১২, ০১৮৭২৪৬৮৯৪২।
লক্ষন - ০১৮৬০১০৩৪০২।
মারুয়াতি কটেজঃ
আমরা এই কটেজে ছিলাম। কটেজের নাম এখনো দেওয়া হয় নাই। এটা রুইলুই পাড়ায় অবস্থিত। ইমানুয়েল রিসোর্টের মালিক এটা ঠিক করে দিয়েছিলো আমাদের। আমরা পুরো কটেজটা ভাড়া নেই। দুইতলা কটেজ। উপরে তিনটা রুম আর নিচে দুইটা রুম। উপরের রুমগুলোতে একটা করে খাট আর নিচের রুমগুলোতে দুইটা করে। আমরা ১৪ জন ছিলাম। প্রতি রাতের ভাড়া ছিলো ৬০০০ টাকা। ৫ টা রুম। প্রতিটায় এটাচড বাথ আছে। পানির সমস্যা নেই।
কটেজের শেষ মাথার উপরের এবং নিচের রুম জোস। এই দুইটা রুম থেকে সূর্যোদয় দেখা যায়।
ফোনঃ ০১৮৬৫৩৪৯১৩০
এছাড়া রয়েছে সারা রিসোর্ট, নাগরিক নক, ইমানুয়েল, আলো রিসোর্ট।
*রিসোর্টের কিছু কিছু তথ্য Nizam Uddin ভাইয়ের নোট থেকে নেওয়া।
***************কিছু জরুরী পরামর্শ***************
*সাজেক যাওয়ার পথে শিশুদের দিকে চকলেট ছুড়ে মারবেন না।
*বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্পে ছবি তোলা নিষেধ।
*সাজেকে আমরা অতিথি। পাহাড়ীদের সংস্কৃতিতে আঘাত লাগে এমন কিছু করবেন না।
*সেনাবাহিনীর লোকরা কোন পরামর্শ দিলে সেটা শুনবেন। তারা আমাদের ভালোর জন্যই বলেন।
*রুইলুই পাড়ার কুয়ায় অবশ্যই গোসল করবেন।
*কংলাক পাড়ায় গেলে পাহাড়ী মরিচ দিয়ে জাম্বুরা ভর্তা খাবেন।
*কংলাক পাড়া সবাই উঠতে পারে তবে বৃষ্টি হলে সাবধান।
*কংলাক পাড়ায় উঠার আগে একটা সাবধান বানী আছে সেটা মানবেন।
*কমলক ঝর্ণায় যাওয়ার সময় ৮০/৮৫ ডিগ্রি এংগেলের খাড়া পাহাড় আছে। ট্রেকিং এর অভ্যাস না থাকলে যাবেন না।
*হাজাছড়া ঝর্ণার উপরে উঠলে বুঝে উঠবেন। এখানে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে।
*রিসাং ঝর্ণায় স্লাইড কাটার সময় সাবধান থাকবেন। এখানে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে।
*অতি দুঃসাহসিক কিছু করতে গিয়ে গ্রুপের সকলকে বিপদে ফেলবেন না।
*সাজেকের বিভিন্ন জায়গায় ময়লা ফেলার ঝুড়ি আছে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না।
*সাজেক যত বেলা, যখনই খাবেন আগে থেকে অর্ডার দিতে হবে।
*রিসোর্ট, জীপ আগে থেকে ঠিক করে যাওয়া ভালো।
*সাজেকে শুধু রবি সিমের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়।
*সাজেকে ইলেকট্রিসিটি নাই তবে জেনারেটর আছে। কোন রিসোর্ট/কটেজে থাকবেন সেটার উপর নির্ভর করবে জেনারেটর সুবিধা পাবেন কিনা। আমরা প্রতিদিন ৬-৮ ঘন্টার মত জেনারেটর সুবিধা পেয়েছিলাম। আর এছাড়া সোলার সিস্টেম আছে। সেগুলো দিয়ে বাতি জ্বলে। তবে পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে যাওয়াটাই ভালো।
*চাঁদের গাড়ির ছাদে যাওয়ার সময় সাবধান থাকবেন। একটু অসাবধানতাও বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে।
*ছেলে বা শুধু মেয়েদের গ্রুপ হোক। সাজেকে নিরাপত্তার কোন সমস্যা নেই।
বিশেষ পরামর্শঃ সাজেকে এখন অনেক কটেজ হয়েছে। তাই মেঘমাচাং, জুমঘর, মেঘপুঞ্জি, আর্মি রিসোর্ট বা ভিউ দেখা যায় এমন রিসোর্টে থাকতে না চাইলে আগে থেকে বুকিং করে যাওয়ার দরকার নেই। সাজেকে গিয়ে নিয়ে সামনা সামনি ঠিক করলে কমদামে ভালো রিসোর্ট পাওয়া যাবে। পিক সিজনে অবশ্যই বুকিং করে যাবেন।
পরিশেষে,
Never lose hope, never stop travelling
সাজেক ঘুরে পানিপথে রাঙামাটি যাওয়ার বিস্তারিতঃ
► https://goo.gl/YHIugp
হাজাছড়া ঝর্ণার ছোট একটি ভিডিওঃ
► https://goo.gl/FvsCac
কংলাক পাড়া ট্রেকিং এর ছোট একটি ভিডিওঃ
► https://goo.gl/wzwT2v
রাঙ্গামাটির কিছু ভিডিওঃ
► https://goo.gl/wZzrLr
২১ তারিখ রাতের বাসে করে যাবো দিঘীনালা। দিঘীনালা থেকে সেই কাঙ্ক্ষিত সাজেক। ২১ তারিখ সারাদিন অনেক বৃষ্টি হওয়ায় কলাবাগান থেকে রাত ৯ টার বাস ছাড়তে ছাড়তে ১০ টা বেজে গেল।
সারাদিন ঘুম ঘুম চোখ থাকলেও বাসে উঠার পর ঘুম চলে গেল। বন্ধুদের সাথে হাসি-ঠাট্টা, মোবাইলে গান শুনতে শুনতে সময় পার হয়ে যাচ্ছিলো। আমরা ছিলাম ১৪ জন। আমরা বাদে বাসে আর ১০ জন যাত্রী ছিলো। তো বলতে গেলে আমাদের রিজার্ভ করা বাসের মতই অবস্থা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড চার লেন হওয়ার পর জ্যাম এখন পরে না বললেই চলে। আমি পাই নাই এখন পর্যন্ত। গাড়ি বেশ ভালো গতিতেই চলছিলো। রাত দুটার দিকে খাবার জন্য বিরতি দেওয়া হলো। খাওয়া দাওয়া করে বাসে বসে ঝিমানোর মত লাগছিলো তখন দেখলাম বাস চট্টগ্রাম রুট ছেড়ে ফেনীর বারোইহাটি নামক জায়গায় এসে বামে ঢুকে গেল। বেশ আগ্রহ নিয়ে নড়েচড়ে বসলাম। কিছুক্ষন পর আবার ঘুম পেয়ে বসলো।
হঠাৎ টের পেলাম বাস পাহাড়ী রাস্তায় যেভাবে টার্ন নিয়ে নিয়ে চলে সেভাবে চলছে। ঘুম ভেঙে গেল। ঘটনা কি বুঝতে সামনে চলে গেলাম। জানতে পারলাম এই রাস্তা শুধু শান্তি ও ইকোনো পরিবহনই নাকি ব্যবহার করে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি পাহাড়ী রাস্তা কোথা থেকে এলো সেই রহস্যর কোন উত্তর পেলাম না। চোখ থেকে ঘুম চলে গেল। দাঁড়িয়ে থেকে কিছুক্ষন দেখার চেষ্টা করলাম কিন্তু এত টার্ন দাঁড়িয়ে থাকা মুশকিল। জায়গা না পেয়ে এর পর চলে গেলাম একেবারে পিছনের সিটে। পাচঁ সিটের মাঝ বরাবর বসে সামনে তাকিয়ে মনে হচ্ছিলো রোলার কোস্টারে আছি। অনেকক্ষন পর ড্রাইভারের পিছনে ছোট বসার জায়গা খালি হলো। এরপর বাকি পথ সেখানে বসেই আসলাম। বাস জার্নির এইটাই বেস্ট পার্ট।
ভোরবেলা দিঘীনালা যখন নামলাম। তখন চারিদিকে কুয়াশা। শীত শীত করতে লাগলো। আগে থেকেই ঠিক করে রাখা জীপ ড্রাইভার আমাদের বনবিহারের গেট থেকে রিসিভ করলো।
প্রথমে গেলাম দিঘীনালা বাসষ্ট্যান্ড নাস্তা করার জন্য। নাস্তা করার পর কিছুক্ষন এদিক সেদিক ঘুরে এরপর গেলাম হাজাছড়া ঝর্ণা। দিঘীনালা বাসষ্ট্যান্ড থেকে ২০ মিনিটের মত লাগে যেতে। বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্পের একটু আগেই রাস্তার পাশে জীপ থেকে নামিয়ে দেয়। এরপর ঝিরি ধরে ১০-১৫ মিনিট হাঁটলেই ঝর্ণার দেখা পাওয়া যায়। তেমন পাহাড়ী পথ না থাকায় সবাই যেতে পারে।
শেষ কবে ঝিরি পথে হেঁটেছি মনে নেই। তাই ঝিরি পথ দেখেই মন খুশিতে ভরে গেল। আমাদের সাথে পিচ্চি এক ছেলে ছিলো জীপের হেল্পার তাকে জিজ্ঞাসা করলাম ঝিরি পথ দিয়ে হেঁটে ঝর্নায় যাওয়া যাবে না? বললো যাবে কিন্তু সময় বেশি লাগবে। আমরা তাই শর্টকাটে আগাচ্ছিলাম।
বেশ দূরে থাকতেই হঠাৎ পানি পড়ার শব্দ শুনতে পেলাম। গতি বেড়ে গেল কিছুটা। গাছ দিয়ে ঢাকা একটা মোড় পেরোতেই দেখা পেলাম হাজাছড়া ঝর্ণার। অনেক উঁচু থেকে পানি পড়ায় এত শব্দ হচ্ছে। আর বৃষ্টি হওয়ায় পানিও ছিলো অনেক বেশি। এই ঝর্নারই আরেকটা নাম আছে "শুকনাছড়া ঝর্ণা।" তবে বর্ষাকালে এই নামে ডাকলে ঝর্ণা রাগও করতে পারে।
ঝর্নার কাছে গিয়েই দেখা পেলাম রংধনুর। এযেন বোনাসের উপর বোনাস। হিমশীতল ঠান্ডা পানি দেখে নিজেকে আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। সাথের কেউ পানিতে নামতে না চাইলে আমি একাই নেমে পড়লাম। এইখানে গোসল করা মিস করা যায় না।
হাজাছড়া ঝর্নার উপরেও যাওয়া যায়। কিন্তু যাওয়ার পথটা বেশ রিস্কি। উঠা হয়ত যাবে কিন্তু নামার সময় ধরার কিছু থাকে না। এইখান থেকে নাকি বেশ কয়েকটা দুর্ঘটনাও হয়েছে।
ঝর্ণা দেখা শেষে আবার জীপের কাছে চলে আসলাম। এখন অপেক্ষার পালা। ১০.৩০টার এসকোর্টে আর্মিদের সাথে যেতে হবে। আগে সাজেকে নিজের ইচ্ছামত জীপ ভাড়া করে যাওয়া গেলেও শান্তি বাহিনীর লোকরা বিগ্রেডিয়ারের জীপে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার পর এখন আর যাওয়া যায় না। সব গাড়ি একসাথে আর্মিরা এসকোর্ট করে নিয়ে যায়। এইজন্য সবগাড়ি আসার অপেক্ষা করতে হয়। খুব বেশি ভীড় যেদিন হয় সেদিন নাকি প্রায় ২০০টা পর্যন্ত জীপ একসাথে সাজেক যায়!
বাঘাইহাটের রাস্তার সাথে একটা দোকান আছে আমরা সেখানে বসে অপেক্ষা করতে থাকলাম। টুকটাক এটা সেটা খেয়ে ১০টার দিকে আর্মি ক্যাম্পে গেলাম। সেখানে সই করতে হয়। সই করে চলে গেলাম বাজারে। যেখান থেকে সব জীপ একসাথে ছাড়বে। বাজারে আবার অপেক্ষার পালা। বাজারে পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, ছোলার দোকান দেখে সবাই হামলে পড়লাম। ১ টাকা পিস পেঁয়াজু আর ৩ টাকা পিস চপ,বেগুনি খেয়ে পেট ভরে ফেললাম। এরপর চোখ পড়লো ডাবের দিকে। ৪০ টাকা দিয়ে ডাব কিনলাম নাকি পানি কিনলাম বুঝলাম না। একটুও মিষ্টি না!
আর্মির এসকোর্ট গাড়ি আসলে সিরিয়াল ধরে সব জীপ চলা শুরু করলো। আমাদের কয়েকজন জীপের ছাদে বসলো। সাজেকে জীপের ছাদে না বসলে নাকি সেই মিস। এই কথা জানার পরও বসলাম না। অনেক রোদ আর ঘুম ঘুম পাচ্ছিলো। পাহাড়ী আঁকাবাঁকা রাস্তা আমার জন্য নতুন কিছু না। তাই জীপের ভিতর বসেই কিছুক্ষনের ভিতর ঘুম চলে আসলো।
অনেকক্ষন ধরে হাতের উপর ভর দিয়ে শুয়ে থাকায় হাতের ব্যাথায় ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ভাঙার পর আশেপাশের রাস্তার দিকে তাকাচ্ছি তখনই ঘটলো অঘটন। হঠাৎ করেই খাড়া একটা ঢালে গাড়ির গিয়ার আটকে গেল। এই জীপগুলোর ব্রেক মারাত্মক। সাথে সাথে ব্রেক করায় জীপ নিচের দিকে নামলো না। আর আমাদের ভাগ্য ভালো ছিলো যে আমাদের ঠিক পিছনেই আরেকটা জীপ ছিলো। সেটা থেকে জ্যাম এনে চাকায় দিয়ে দিলো। এখন আর জীপ ব্রেক না করলেও পড়বে না। হঠাৎ এই ঘটনায় হৃৎপিন্ড যেন বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। এরপর ড্রাইভার বললো কয়েকজনকে নামতে। তখন একেবারে খাড়া ঢালে থাকায় নামতে গিয়ে এক বন্ধু প্রায় পরে যায় এমন দশা। সাবধানে কেন নামে নাই এইজন্য ওকে বকা দিয়ে আমিও নামতে গিয়ে দেখি টাল সামলানো আসলেই কঠিন। ড্রাইভার কিছুক্ষনের মধ্যেই গিয়ার ঠিক করে ফেললো। আবার গাড়ি চলতে শুরু করলো। তখন বার বার বলতেছিলো তার পাঁচ বছর হলো এই লাইনে ড্রাইভ করে কখনো এমন হয় নাই!
এত ভয়ের মধ্যেও হাসি লাগলো যখন দেখলাম আমাদের জীপকে ওভারটেক করে গেল অকটেন চালিত সিএনজি। মাত্র ঠিক হওয়ায় তখনও স্পিড পাচ্ছিলো না। কিছুক্ষন পরেই অবশ্য আমদের জীপ সেটাকে ওভারটেক করলো। স্বস্তি নিয়ে নড়েচড়ে বসা মাত্রই জীপের এক্সটা টায়ার যেটা গ্রিলের সাথে বাঁধা ছিলো বিকট শব্দে পাংচার হলো। এইবার মনে হলো যেন আত্মা বেরই হয়ে যাবে! বাকি রাস্তা আমার বেশ ভয়েই কাটলো। খাড়া ঢাল দেখলেই ভয় ভয় লাগতেছিলো।
যাই হোক অবশেষে আমাদের থাকার জায়গা মারুয়াতি কটেজে চলে আসলাম। এটা রুইলুই পাড়ায় অবস্থিত। কটেজ দেখে আমাদের তো মাথা নষ্ট। দোতলা কটেজ পুরোটাই আমাদের। উপরে তিনটা রুম আর নিচতলায় ২ টা রুম। উপরে কোনার রুম থেকে ভিউও অনেক জোস। এই রুমে শুয়েই সূর্যোদয় দেখা যাবে!
রুমে ব্যাগ রেখে আমরা রিসোর্টের মালিককে ধরলাম আশেপাশে কোন পুকুর(!) বা ঝর্ণা আছে নাকি গোসল করার জন্য। যদিও কটেজের প্রতিটা রুমে এটাচাড বাথ তবে পাহাড়ে এসে কে কলের পানিতে গোসল করতে চায়! উনি জানালেন ঝর্ণা একটা আছে কিন্তু সেটা ২-২.৩০ ঘন্টার পথ। আমরা হতাশ হতেই বললেন কিন্তু কুয়া আছে। যেটার পানি অনেক ঠান্ডা। আর যেতে পাচঁ মিনিটের মত লাগবে। আমরা তো মহাখুশি। সবাই উনার পিছে পিছে হাঁটা ধরলাম। কিন্তু একি পাঁচ মিনিটের পথ বললেও পথ তো শেষ হয় না। তারউপর সাজেকে অনেক গরম। গোসল করে আবার হোটেলে আসতে আসতে আরেকদফা গোসল হয়ে যাবে। আমাদের সাথে আসা এক বন্ধু অর্ধেক পথ এসে ফিরে গেল। কিন্তু আমরা যেতে থাকলাম। দেখি কি আছে। বেশ কিছুক্ষন পিচঢালা রাস্তায় হাঁটার পর এরপর রাস্তার পাশের মাটির রাস্তায় চলে গেলাম। আরো কিছুক্ষন হাঁটার ঢালু রাস্তা পেরিয়ে অবশেষে সেই কুয়ার সন্ধান পেলাম। কুয়ার পানি দেখে তো আমরা সেই খুশি। পানির রঙটাই কেমন আকাশী নীল। এতক্ষন ধরে হেঁটে আসাটা সার্থক!
ঝর্ণার পানি থেকে এই কুয়ার সৃষ্টি। খাওয়া ও গোসল দুই কাজে ব্যবহার করা হয় এই পানি। এজন্য দুইটা কুয়া আছে। খাওয়ার পানি নেওয়ার কুয়াটা অগভীর ছোট। আর গোসলের কুয়াটা বেশ গভীর। আমরা মনের ইচ্ছা মত গোসল করলাম। অসম্ভব ঠান্ডা পানি। তবে এক মগ পানি গায়ে ঢালতেই শরীরের সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। গোসল করে আবার কটেজের পথ ধরলাম। যাওয়ার সময় শুধু নামা পথ থাকলেও উঠার সময় কিছুটা ঢাল পার হতে হয়। তবে ওই পানিতে গোসল করার জন্য এতটুকু কষ্ট মেনে নেওয়াই যায়।
গোসল শেষে এবার গেলাম মারুয়াতী দিদির হোটেল। আমরা বসতেই গরম গরম ভাত, মুরগি, পাহাড়ী সবজি আর ডাল চলে আসলো। মুরগির তরকারীতে সে কি ঝাল। আমি ঝাল অনেক বেশি খাই দেখে আমার কাছে অনেক মজাই লাগলো তবে বাকিদের খেতে বেশ কষ্টই হলো। কিন্তু খাবারটা অনেক মজার ছিলো। গোসল শেষ, খাওয়া শেষ এবার লম্বা ঘুম দেবার পালা। সাজেকে যেহেতু দুই রাত থাকবো তাই সূর্যাস্ত পরেরদিন দেখা যাবে এই চিন্তা করে লম্বা এক ঘুম দিলাম।
ঘুম থেকে উঠে বের হলাম সাজেক দর্শনে। সাজেকের প্রথম পাড়া রুইলুই পাড়ার উচ্চতা ১৮০০ ফুট। আমাদের কটেজও এই রুইলুই পাড়াতেই। কটেজের অপজিটেই বিশাল এক গাছ সেই গাছের নিচে বসার ব্যবস্থা আছে। সেখানে বসে কিছুক্ষন হাওয়া বাতাস খেয়ে বের হলাম চায়ের সন্ধানে। চা খেয়ে এবার বের হলাম হেলিপ্যাডে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। সাজেকের রাস্তায় স্ট্রিট লাইট রয়েছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় নেই। সেখানেই মজা। অন্ধকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালে দেখা পাওয়া যায় অসংখ্য তারার। আকাশ খুব পরিষ্কার থাকলে দেখে মিলে মিল্কিওয়ের!
হেলিপ্যাড-২ রুন্ময় রিসোর্ট থেকে একটু সামনে। আমাদের কটেজ থেকে ১ কিলোর পথ। রাতের আকাশ দেখতে দেখতে আমরা চলে আসলাম হেলিপ্যাডে। ঢাল পেরিয়ে হেলিপ্যাডে উঠে আমরা তো থ! আকাশে বিশাল এক চাঁদ এবং সেই চাঁদের আলোয় পুরো হেলিপ্যাড আলোকিত। সিরিয়াল ধরে সবাই বসে পড়লাম। এখন হবে চন্দ্রস্নান!
রাতের খাবার খেয়ে বের না হওয়ায় বেশি থাকা গেল না। হোটেলে গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে আর হেলিপ্যাডে যাওয়ার শক্তি না থাকায় সবাই কটেজে চলে আসলাম। কটেজের বারান্দা থেকে চাঁদের আলো দেখে ভ্রম হচ্ছিলো। আর সেই ভ্রমে আমি হারিয়ে যাচ্ছিলাম। গল্প, আড্ডা-গান দিয়ে শেষ হলো সাজেকের প্রথম রাত।
এল্যার্মের শব্দে ভোর ৪.৩০টায় ঘুম ভাঙলে রুমে বসে কয়েকটা ছবি তুলে আবার শুয়ে পড়লাম। চোখ জুড়ে শুধু ঘুম। সকালে উঠে সবাই যখন নাস্তা করতে গেল আমি তখন বের হলাম সাজেক ভ্রমণে। হেঁটে হেঁটে চলে গেলাম সাজেক ০ কি.মি. লেখা মাইল ফলকের কাছে। সেখানে ছবি তুললাম, ঘুরাঘুরি করলাম। সাজেকে অনেক কিছুই আছে। দোলনা, তীর নিক্ষেপ, বসার সুন্দর ব্যবস্থা, পিকনিক স্পট। এ জন্যই সাজেক এত জনপ্রিয়!
ফিরতি আসার পথে বিজিবির ক্যাম্প দেখে সেখানে গেলাম। গার্ডরত দুই বিজিবির সাথে বেশ কিছুক্ষন গল্প করলাম। জানতে পারলাম দূরে সবচেয়ে বড় যে পাহাড় যার আড়াল থেকে সূর্যি মামা বের হয় তার নাম "লুসাই পাহাড়" । এই পাহাড়টা ভারতের। আর বাংলাদেশ-ভারতের যে বর্ডার সেটার নাম মিজোরাম বর্ডার। রাতে লক্ষ্য করলে নাকি দূরে ভারত বর্ডার ক্যাম্পের আলো দেখতে পাওয়া যায়। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যে পতাকা বৈঠক হয় সেখানে যেতে সাজেক থেকে ১ দিন সময় লাগে। একটা পতাকা বৈঠক শেষ করে আবার সাজেক আসতে সময় লাগে তিনদিন। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে সেখানে যেতে হয়।
কংলাক পাড়ায় যেতে হয় ভোরে কিন্তু আমাদের কয়েকজনের সকালে কিছু কাজ থাকায় আমরা ভোরে যেতে পারি নি। নাস্তার পর আমরা বের হলাম কংলাক যাওয়ার জন্য। হাঁটা পথে কংলাক যেতে সময় লাগে ৪৫ মিনিটের মত। তবে আমরা জীপ নিয়ে কংলাক যাওয়ার পথে এক খাড়া ঢালের মত জায়গায় নামলাম। এখান থেকে সময় লাগে মাত্র ১০ মিনিট। লম্বা ঢালু একটা পথ উঠতেই দেখা পেলাম ছোট একটা পাড়ার। এটার নামই কংলাক পাড়া।
কংলাক পাড়া সাজেকের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় সিপ্পু পাহাড়ে অবস্থিত। সিপ্পু পাহাড় সাজেক তো বটেই পুরো রাঙামাটি জেলার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। সিপ্পু পাহাড়ের উচ্চতা ২৮০০ ফুট। সিপ্পু পাহাড়ের চূড়া থেকে পুরো সাজেকের ৩৬০ ভিউ পাওয়া যায়। কংলাক পাড়ায় পাংখোদের বসবাস। এপাড়ার অনেকে বাংলায় কথা বলতে না পারলে ইংরেজিতে বেশ দক্ষ। আমাদের সাথেই একজন ইংরেজি বেশ স্বতর্ফূত কথা বলছিলো। কংলাক পাড়া থেকে ভারতের মিজোরাম রাজ্য বেশ কাছে। হাঁটা পথে ২ ঘন্টার পথ। তাই অনেকেই ভারতের মিজোরাম রাজ্যে গিয়ে পড়াশুনা করে। পাংখোরা এমনিতে বেশ আধুনিক অনান্য আদিবাসিদের থেকে।
কংলাক পাড়ায় রয়েছে সুস্বাদু লাল পেয়ারা, কলা, জাম্বুরা। আমরা খাবারে উপর ঝাপিয়ে পড়লাম। পাহাড়ী মরিচের কথা না বললেই নয়। এত ঝাল বলার বাইরে। খেয়ে দেয়ে এরপর চূড়ায় গেলাম। ছবি তুলে এরপর গেলাম রক কটেজের কাছে। কটেজটা বেশ পছন্দ হয়েছে। তবে আর্মিরা এখানে থাকতে না করে দিয়েছে। তাদের এখানে ক্যাম্প না থাকায় এই জায়গায় থাকাটা নিরাপদ না। তবে পরিবেশের কথা চিন্তা করলে। ১০০ তে ১৫০ একটা জায়গা। আশেপাশে আর কিছু নেই। নাম না জানা এক পোকার এক টানা ঝি ঝি শব্দ। একেবারে RAW ফিলিংস!
সাজেক আমার কাছে অনেক কমার্শিয়াল মনে হয়েছে। প্রায় সব কটেজ, রিসোর্টগুলোই এটাচ বাথ তৈরি করে রুমের ভাড়া বেশি নেয়। এমনিতে আর্মিদের কল্যানে সাজেকের পরিবেশ অত্যন্ত চমৎকার। সব জায়গা পরিষ্কার। পরিষ্কার, প্রশস্ত ফুটপাত। তবে এত কৃত্রিমতা আমার কাছে ভালো লাগে নাই। পাহাড় হবে পাহাড়ের মত। যেখানে একটু কষ্ট করতে হবে। এত বিলাসিতা থাকবে না। তবে একদিক দিয়ে ভালো হয়েছে এই যে এখানে অনেক কম খরচে থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। পাহাড়, মেঘ দেখার শখ সবার পূরন হবে এখন।
সাজেকের রাস্তায় হাঁটলে মনে হবে যেন কোন এক গ্রামের রাস্তায় হাঁটতেছি। যেই গ্রামের রাস্তাগুলো পিচঢালা। দুইপাশে তাকিয়ে পাহাড় দেখলে তখন সম্ভিত ফিরে আসে। মনে হয় না আমি পাহাড়ে আছি। সাজেকের মানুষজন খুব ভালো।
সাজেক গিয়ে আমার যেটা মনে হয়েছে,
সাজেকের দুঃখ হলো "লুসাই পাহাড়"। সাজেকের দুই পাশে রাস্তায় তাকালে যেদিক দিয়ে সূর্যোদয় হয় সেপাশে দেখা যাবে ছোট ছোট অনেক পাহাড়ের পরে দূরে বিশাল এক পাহাড়, এটাই লুসাই পাহাড়। যেই লুসাই পাহাড় থেকে কর্ণফুলী নদীর সৃষ্টি হয়েছে। যেদিকে যত দূরেই যান এই পাহাড় আপনাকে অনুসরন করবে। কিন্তু পাহাড়টি আমাদের না, ভারতের। এর চেয়ে বড় দুঃখ আর কি হতে পারে!
***************সাজেকে দেখার যা যা আছে***************
i)রুইলুই পাড়া
ii)মেঘমাচাং কটেজ (না থাকলেও গিয়ে দেখা উচিত)
iii)সাজেক ভ্যালি রিসোর্ট (না থাকলেও গিয়ে দেখা উচিত)
iv)স্টোন গার্ডেন (সাজেক ভ্যালি রিসোর্টের পাশে, ২০ টাকা টিকেট)
v)রুইলুই পাড়া থেকে সাজেক হাঁটাহাঁটি করা (রাস্তার ফুটপাতগুলো অসাধারন)
vi)হেলিপ্যাড-১ এ বসে সূর্যাস্ত দেখা
vii)হেলিপ্যাড-২ এ বসে সূর্যোদয় দেখা
viii)কংলাক পাড়া ঘুরা (সাজেক থেকে হেঁটে যেতে ৪৫ মিনিট লাগে, ভোর বেলা যাওয়া ভালো)
ix)কংলাক পাড়ার চূড়ায় বসে সূর্যোদয় দেখা
x)হেলিপ্যাড-২ এর পাশের দোলনায় দোল খাওয়া
xi)ঝাড়ভোজ পিকনিক স্পটে যাওয়া (২০ টাকা টিকেট)
xii)রুন্ময় রিসোর্ট (না থাকলেও গিয়ে দেখা উচিত)
xiii)হেলিপ্যাডে বসে রাতের আকাশ উপভোগ করা
xiv)খুব ভোরে মেঘের চাদরে ঢাকা পাহাড় দেখা
xv)কমলক ঝর্ণা (হেঁটে যেতে ২-২.৫ ঘন্টা লাগে, রুইলুই পাড়া থেকে গাইড ৩০০-৩৫০ নিবে)
xvi)রুইলুই পাড়ার কুয়াতে গোসল করা
***************খাগড়াছড়িতে দেখার যা যা আছে***************
i)রিসাং ঝর্ণা
ii)আলুটিলা গুহা
iii)সিস্টেম রেস্তোরা
iv)পর্যটন মোটেল
***************দিঘীনালাতে দেখার যা যা আছে***************
i)হাজাছড়া ঝর্ণা
ii)ঝুলন্ত ব্রিজ
iii)দিঘীনালা বনবিহার
iv)তৈদুছড়া ঝর্ণা
v)সিজুক ঝর্ণা
***************সাজেক যাওয়ার উপায়***************
সাজেক দুইভাবে যাওয়া যায়। খাগড়াছড়ি থেকে জীপ ভাড়া করে অথবা দিঘীনালা থেকে জীপ ভাড়া করে।
প্ল্যান -১ঃ
রাতের বাসে খাগড়াছড়ি গিয়ে জীপ ভাড়া করে রিসাং, আলুটিলা গুহা দেখে, দুপুরে খাগড়াছড়ির বিখ্যার "সিস্টেম রেস্তোরা"য় খেয়ে ৩ টার এসকোর্টে সাজেক যাওয়া। সাজেকে যতদিন ইচ্ছা থেকে ফিরত আসার দিন সকাল ১০.৩০ টার এসকোর্টে রওনা হয়ে হাজাছড়া ঝর্ণা ঘুরে খাগড়াছড়ি/দিঘীনালা থেকে ঢাকার বাসে উঠা।
প্ল্যান-২ঃ
রাতের বাসে দিঘীনালা গিয়ে হাজাছড়া ঝর্ণা দেখে সকাল ১০.৩০টার এসকোর্টে সাজেক যাওয়া। সাজেকে যতদিন ইচ্ছা থেকে ফিরত আসার দিন ৩ টার এসকোর্টে খাগড়াছড়ি আসা। খাগড়াছড়ি সে রাতে থেকে পরের দিন খাগড়াছড়ির সব স্থান দেখা। সেদিন রাতের বাসে ঢাকায় ব্যাক করা।
প্ল্যান-৩ঃ
ট্রেকিং এর অভ্যাস থাকলে দিঘীনালাতে একদিন বেশি থেকে তৈদুছড়া ঝর্ণা ঘুরে আসতে পারেন। অথবা খাগড়াছড়ির সীমানা পাড়া দিয়েও তৈদুছড়া ঝর্ণায় যাওয়া যায়। এই পথে সময় কম লাগে। এছাড়া বাকিসব প্ল্যান-১,২ এর মতই।
***************যাতায়াত খরচ***************
ঢাকা-খাগড়াছড়ি - ৫২০ টাকা (হানিফ,শ্যামলীসহ অনেক বাস যায়)
ঢাকা-দিঘীনালা - ৫৮০ টাকা (শুধু শান্তি পরিবহণ যায়)
খাগড়াছড়ি-দিঘীনালা বাসে - ৪৫ টাকা
খাগড়াছড়ির রিসাং,গুহা দেখার জন্য জীপ ভাড়া - ১৫০০/২০০০ টাকা
জীপে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক - ৯০০০+ (সাজেক থাকবেন, আশেপাশে স্পট ঘুরবেন)
জীপে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক - ৫০০০+ (দিনে দিনে চলে আসলে)
জীপে দিঘীনালা থেকে সাজেক - ৭০০০+ (সাজেক থাকবেন)
জীপে দিঘীনালা থেকে সাজেক - ৪০০০+ (দিনে দিনে চলে আসলে)
সিএনজিতে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক - ৩০০০+
বাইকে দিঘীনালা থেকে সাজেক - ৬০০-১২০০
রুইলুই পাড়ায় প্রবেশের সময় জীপ প্রবেশ ফি - ১০০ টাকা
রুইলুই পাড়ায় প্রবেশের সময় প্রতিজন প্রবেশ ফি - ২০ টাকা
পাহাড়ী রাস্তা হওয়ায় আমার সাজেশন থাকবে বাইক বা সিএনজিতে না গিয়ে জীপ গাড়ি দিয়ে যাওয়ার। আর যেভাবেই যান না কেন দামাদামি করবেন। কোন ফিক্সড ভাড়া এই পথে নেই।
এমনিতে সাজেকে যাওয়ার জীপ খাগড়াছড়ি/দিঘীনালাতে গিয়েই পাওয়া যায়। তবে ছুটির দিনে গেলে অনেক ভীড় থাকে তখন পাওয়া নাও যেতে পারে বা পেলেও ভাড়া বেশি চাইতে পারে। তাই আগে থেকে ঠিক করে যাওয়াই ভালো।
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যেতে সময় লাগে ৩ ঘন্টার মত আর দিঘীনালা থেকে ২.৩০ ঘন্টা।
দীঘিনালার চাঁদের গাড়ির ড্রাইভার শিবু- ০১৮২০৭৪৬৭৪৪।
*খাগড়াছড়ি থেকে এখন জীপ সমিতি থেকে ফ্রিক্সড প্রাইসে জীপ নিতে হয়।
*খরচের কিছু কিছু তথ্য Shaheen Kamal ভাইয়ের নোট থেকে নেওয়া।
***************খাবার খরচ***************
খাবার খরচ আইটেমভেদে ১০০-১৮০ এর মধ্যেই হয়ে যাবে।
ভাত,ডাল,দেশি মুরগি, সবজি - ১৮০ টাকা
রক ক্যান্টিনে, বারবিকিউঃ ১ পিস মুরগি - ২৫০ টাকা, পরোটা - ১০ টাকা
পাহাড়ী হোটেলে, বারবিকিউঃ ১ পিস মুরগি - ২০০ টাকা, পরোটা - ১০ টাকা
সেনাবাহিনী পরিচালিত ক্যান্টিন হচ্ছে রক ক্যান্টিন। ওদের খাবারের দাম অন্য সব জায়গা থেকে অনেক বেশি।
সাজেকে খাবার রান্না করা থাকে না। যাই খাবেন, যখনই খাবেন আগে থেকে খাবার অর্ডার করে রাখতে হবে। সাজেক যাওয়ার সময় যেখানে থাকবেন তাদের বললে অথবা জীপ ড্রাইভারকে বললে খাবারের ব্যবস্থা করে রাখবে। সাজেকে সবকিছুই পাওয়া যায় তবে দাম একটু বেশি।
***************থাকার ব্যবস্থা***************
সাজেকে থাকার অনেক রিসোর্ট, আদিবাসিদের বাসা রয়েছে।
আর্মিদের দুইটা রিসোর্ট আছেঃ
i)রুইলুই পাড়ায়, সাজেক রিসোর্টঃ
সাজেক রিসোর্টের দ্বিতীয় তলায় চারটি কক্ষ আছে। ভি আই পি কক্ষ ১৫,০০০ টাকা। অন্যটি ১২,০০০ টাকা। অপর দুইটি ১০,০০০ টাকা করে প্রতিটি। খাবারের ব্যবস্থা আছে। যোগাযোগ : খাগড়াছড়ি সেনানিবাসের গিরি থেবার মাধ্যমে বুকিং দিতে হবে। যার নম্বর : ০১৮৫৯০২৫৬৯৪। আরেকটি নম্বর : ০১৮৪৭০৭০৩৯৫।
ii)সাজেকে, রুন্ময় রিসোর্টঃ
রুন্ময়ের নীচ তলায় তিনটি কক্ষ আছে। প্রতিটির ভাড়া ৪৪৫০ টাকা। প্রতিটি কক্ষে ২ জন থাকতে পারবেন। ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। উপরের তলায় দুইটি কক্ষ আছে ভাড়া ৪৯৫০ টাকা। প্রতিটি কক্ষে দুই জন থাকতে পারবেন। এটাতেও ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। চারটি তাবু আছে প্রতি তাবুতে ২৮৫০ টাকা দিয়ে চার জন থাকতে পারবেন। যোগাযোগ : ০১৮৬২০১১৮৫২।
মেঘমাচাংঃ
সাজেকে থাকার অন্যতম বেস্ট জায়গা হচ্ছে মেঘমাচাং। মেঘের উপরই মেঘমাচাং। এ যেন মেঘের উপর বাড়ি। এদের তিনটা কটেজ আছে। ভাড়া প্রতিরুম ২৫০০-৩০০০ টাকা। প্রতি রুমে ৬ জন করে থাকতে পারে। ভীড় কম থাকলে এক এক রুমে ৮-১০ জনও থাকতে দেয় তবে সেটা সবসময় না। ফোনঃ ০১৮২২১৬৮৮৭৭
জুমঘরঃ
সাজেকে আগে শুধু মেঘমাচাং থেকেই মেঘের ভেলায় ভাসা গেলেও এখন জুমঘর নামক আরেকটি রিসোর্ট হয়েছে। বুকিং এবং বিস্তারিতঃ বুকিং এবং বিস্তারিত - 01884208060
মেঘপুঞ্জিঃ
মেঘের ভেলায় থাকার জন্য এটাও ভালো একটি রিসোর্ট। এদের চারটি কটেজ আছে। ভাড়া ২৫০০-৩০০০ টাকা।
যোগাযোগঃ 01911722007, 01815761065
সাইটঃ http://www.meghpunji.com/
রুইলুই পাড়া ক্লাব হাউজ :
এটি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়াতে অবস্থিত। এখানে ১৫ জনের মত থাকতে পারবেন। ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ টাকা করে দিতে হবে। নিজেরা রান্না করে খেতে পারবেন। এর কেয়ার টেকার মইয়া লুসাই দাদা সব ব্যবস্থা করে দিবে। লক্ষন নামেও একজন আছে, প্রয়োজনে আপনাদের সহযোগীতা করবে। এখানে দুইটি টয়লেট আছে। একটি ফ্রি ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যটির জন্য ২০০ টাকা প্রদান করতে হবে। যোগাযোগ : মইয়া লুসাই - ০১৮৩৮৪৯৭৬১২, ০১৮৭২৪৬৮৯৪২।
লক্ষন - ০১৮৬০১০৩৪০২।
মারুয়াতি কটেজঃ
আমরা এই কটেজে ছিলাম। কটেজের নাম এখনো দেওয়া হয় নাই। এটা রুইলুই পাড়ায় অবস্থিত। ইমানুয়েল রিসোর্টের মালিক এটা ঠিক করে দিয়েছিলো আমাদের। আমরা পুরো কটেজটা ভাড়া নেই। দুইতলা কটেজ। উপরে তিনটা রুম আর নিচে দুইটা রুম। উপরের রুমগুলোতে একটা করে খাট আর নিচের রুমগুলোতে দুইটা করে। আমরা ১৪ জন ছিলাম। প্রতি রাতের ভাড়া ছিলো ৬০০০ টাকা। ৫ টা রুম। প্রতিটায় এটাচড বাথ আছে। পানির সমস্যা নেই।
কটেজের শেষ মাথার উপরের এবং নিচের রুম জোস। এই দুইটা রুম থেকে সূর্যোদয় দেখা যায়।
ফোনঃ ০১৮৬৫৩৪৯১৩০
এছাড়া রয়েছে সারা রিসোর্ট, নাগরিক নক, ইমানুয়েল, আলো রিসোর্ট।
*রিসোর্টের কিছু কিছু তথ্য Nizam Uddin ভাইয়ের নোট থেকে নেওয়া।
***************কিছু জরুরী পরামর্শ***************
*সাজেক যাওয়ার পথে শিশুদের দিকে চকলেট ছুড়ে মারবেন না।
*বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্পে ছবি তোলা নিষেধ।
*সাজেকে আমরা অতিথি। পাহাড়ীদের সংস্কৃতিতে আঘাত লাগে এমন কিছু করবেন না।
*সেনাবাহিনীর লোকরা কোন পরামর্শ দিলে সেটা শুনবেন। তারা আমাদের ভালোর জন্যই বলেন।
*রুইলুই পাড়ার কুয়ায় অবশ্যই গোসল করবেন।
*কংলাক পাড়ায় গেলে পাহাড়ী মরিচ দিয়ে জাম্বুরা ভর্তা খাবেন।
*কংলাক পাড়া সবাই উঠতে পারে তবে বৃষ্টি হলে সাবধান।
*কংলাক পাড়ায় উঠার আগে একটা সাবধান বানী আছে সেটা মানবেন।
*কমলক ঝর্ণায় যাওয়ার সময় ৮০/৮৫ ডিগ্রি এংগেলের খাড়া পাহাড় আছে। ট্রেকিং এর অভ্যাস না থাকলে যাবেন না।
*হাজাছড়া ঝর্ণার উপরে উঠলে বুঝে উঠবেন। এখানে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে।
*রিসাং ঝর্ণায় স্লাইড কাটার সময় সাবধান থাকবেন। এখানে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে।
*অতি দুঃসাহসিক কিছু করতে গিয়ে গ্রুপের সকলকে বিপদে ফেলবেন না।
*সাজেকের বিভিন্ন জায়গায় ময়লা ফেলার ঝুড়ি আছে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না।
*সাজেক যত বেলা, যখনই খাবেন আগে থেকে অর্ডার দিতে হবে।
*রিসোর্ট, জীপ আগে থেকে ঠিক করে যাওয়া ভালো।
*সাজেকে শুধু রবি সিমের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়।
*সাজেকে ইলেকট্রিসিটি নাই তবে জেনারেটর আছে। কোন রিসোর্ট/কটেজে থাকবেন সেটার উপর নির্ভর করবে জেনারেটর সুবিধা পাবেন কিনা। আমরা প্রতিদিন ৬-৮ ঘন্টার মত জেনারেটর সুবিধা পেয়েছিলাম। আর এছাড়া সোলার সিস্টেম আছে। সেগুলো দিয়ে বাতি জ্বলে। তবে পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে যাওয়াটাই ভালো।
*চাঁদের গাড়ির ছাদে যাওয়ার সময় সাবধান থাকবেন। একটু অসাবধানতাও বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে।
*ছেলে বা শুধু মেয়েদের গ্রুপ হোক। সাজেকে নিরাপত্তার কোন সমস্যা নেই।
বিশেষ পরামর্শঃ সাজেকে এখন অনেক কটেজ হয়েছে। তাই মেঘমাচাং, জুমঘর, মেঘপুঞ্জি, আর্মি রিসোর্ট বা ভিউ দেখা যায় এমন রিসোর্টে থাকতে না চাইলে আগে থেকে বুকিং করে যাওয়ার দরকার নেই। সাজেকে গিয়ে নিয়ে সামনা সামনি ঠিক করলে কমদামে ভালো রিসোর্ট পাওয়া যাবে। পিক সিজনে অবশ্যই বুকিং করে যাবেন।
পরিশেষে,
Never lose hope, never stop travelling
সাজেক ঘুরে পানিপথে রাঙামাটি যাওয়ার বিস্তারিতঃ
► https://goo.gl/YHIugp
হাজাছড়া ঝর্ণার ছোট একটি ভিডিওঃ
► https://goo.gl/FvsCac
কংলাক পাড়া ট্রেকিং এর ছোট একটি ভিডিওঃ
► https://goo.gl/wzwT2v
রাঙ্গামাটির কিছু ভিডিওঃ
► https://goo.gl/wZzrLr
Writer Himel Hasan
0 comments:
Post a Comment