পানামায় বাংলাদেশের পতাকা ওড়াবার এখনই সময়

পানামায় বাংলাদেশের পতাকা ওড়াবার এখনই সময়

প্রশান্ত মহাসাগর থেকে আটলান্টিক মহাসাগরের ‘প্রবেশদ্বার’ পানামা খালকে ঘিরে গড়ে ওঠা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফ্রি ট্রেড জোন (মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল) পানামা। শুধু দুই মহাসাগরই নয়, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মিলনস্থলে মিশেছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দেশটির ভৌগোলিক সীমারেখা।
সারা বিশ্বের মোট শিপিং ব্যবসার ২৫ শতাংশ এখন এদের হাতে। বাংলাদেশের স্বার্থে পানামাতে তাই যত দ্রুত সম্ভব নিজস্ব অফিস তথা মিশন খোলা অত্যাবশ্যক বলে জানিয়েছেন মেক্সিকোতে দায়িত্বরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা। 
গত শনিবার (২৩ এপ্রিল) এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি তুলে ধরেন পানামা ফ্রি ট্রেড জোনের বিশাল গুরুত্বের কথা।
মেক্সিকো সিটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কোস্টারিকা, হন্ডুরাস এবং ইকুয়েডর ছাড়াও পানামা দেখা হয়ে থাকে। বিশ্বায়নের এই যুগে বিশ্ববাণিজ্যের অন্যতম স্থাপনা পানামা ফ্রি ট্রেড জোনে বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার এখনই উপযুক্ত সময় বলে জানান রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা। এর জন্য প্রয়োজন একটি স্থায়ী কনস্যুলেট অফিস স্থাপন। 
তিনি বলেন, ‘চাইনিজরা তো আছেই, ভারতীয়রাও মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করছে পানামা ফ্রি ট্রেড জোনকে ঘিরে। কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমরা পিছিয়ে আছি নিজেদের অফিস না থাকার কারণে।  বাংলাদেশের তরফ থেকে আমরা চাইলেই কিন্তু ঢুকে যেতে পারি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলে।’
পানামার বিশ্বখ্যাত এই ফ্রি ট্রেড জোনের আদ্যোপান্ত অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়াও পাঁচটি সমুদ্রবন্দর রয়েছে এখানে, যেগুলোতে দেয়া হচ্ছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সেরা সার্ভিস। ১০০টি দেশের ১২ হাজার ৯শ জাহাজ প্রতি বছর চলাচল করে থাকে পানামা খাল দিয়ে। রেজিস্টার্ড জাহাজের সংখ্যায় (৮ হাজার) বিশ্বে বর্তমানে সর্ববৃহৎ এখানকার স্থাপনা। 
পানামা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে থাকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ৫৮টি যাত্রীবাহী এয়ারলাইন্স। বিগ ভলিউমের পন্য আমদানি-রপ্তানি সামাল দিতে কার্গো বিমানগুলোকে পরিচালনা করতে হয় শত শত স্পেশাল ফ্লাইট।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় ৯০টি ব্যাংক তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে পানামাতে, যাদের লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ১৫টি বৃহৎ আন্তর্জাতিক ব্যাংকের শাখা রয়েছে সরাসরি এখানকার ফ্রি ট্রেড অঞ্চলে। 
ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য চমকপ্রদ আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ইউএস ডলারের সাথে পানামার স্থানীয় মুদ্রা বালবোয়ার বিনিময় হার একেবারেই সমান অর্থাৎ ১ ডলার সমান ১ বালবোয়া। ৪৫০ হেক্টর জুড়ে গড়ে ওঠা ফ্রি ট্রেড স্থাপনায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে আড়াই হাজার। মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল হিসেবে যদিও হংকংয়ের অবস্থান এক নম্বরে, কিন্তু ভৌগোলিক কারণে পৃথিবীর সবচাইতে সুবিধাজনক স্থানে রয়েছে পানামা।
দ্রুততার সাথে সঠিকভাবে সব ধরনের সার্ভিস দেয়ার ক্ষেত্রে পানামা ফ্রি ট্রেড জোনের রয়েছে সুখ্যাতি। বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট পণ্য হ্যান্ডেল হয়ে থাকে এই জোনে, যেখানে কর্মরত আছেন প্রায় ২৮ হাজার দক্ষ কর্মী। বছরে প্রায় আড়াই লাখ বায়ার এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজনসহ পর্যটকদের আতিথেয়তা দিয়ে থাকে পানামা। 
এশিয়া, ইউরোপ এবং নর্থ আমেরিকা থেকে আমদানিকৃত পণ্য এই ফ্রি ট্রেড জোনের মাধ্যমে ‘ইন’ করার পর বাজারজাত হয় নর্থ, সেন্ট্রাল এবং সাউথ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। সর্বাধুনিক যোগাযোগ সুবিধা এবং চোখধাঁধানো পর্যটন সুব্যবস্থাও পানামার আকর্ষণে বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে।
বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নবদিগন্তের সূচনা করতে রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা যদিও বলছেন পানামাতে কনস্যুলেট অফিস স্থাপনের কথা, কিন্তু আসলে সহসাই এখানে প্রয়োজন হবে ইকোনমিক অ্যান্ড কমার্স উইংসহ পূর্ণাঙ্গ একটি বাংলাদেশ দূতাবাসের, এমনটাই মনে করছেন ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। 
বাংলাদেশ থেকে বৈধ জনশক্তি রপ্তানিরও অপার সম্ভাবনার দেশ পানামা। সময়ের প্রয়োজন পূরণে তাই রাজধানী পানামা সিটিতে স্থায়ীভাবে লাল-সবুজ পতাকা উড়লে দেশটির শিপিং সেক্টরে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির পথ প্রশস্ত হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত। 
লেখক : ইতালী প্রবাসী, সাংবাদিক
Share on Google Plus

About Jessica Hornberger

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment