বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকদের কাজে মুগ্ধ লেবানন। এ জন্য বাংলাদেশি শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন করে আরও কর্মী নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তারা।
লেবাননের শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলামের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এই আশ্বাস দেন দেশটির শ্রমমন্ত্রী সিজান আজ্জির। ১১ আগস্ট এই বৈঠক হয়। এ সময় বাংলাদেশ থেকে নির্মাণ খাতসহ চিকিৎসক, নার্স, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন খাতে কর্মী নেওয়ার অনুরোধ জানান বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী।
১৯৯১ সালে ২৫ জন নারী কর্মীর মাধ্যমে লেবাননে বাংলাদেশি কর্মী যাওয়া শুরু। এ বছরের জুলাই পর্যন্ত ১ লাখ ৪১ হাজার ৪৯৫ জন কর্মী লেবাননে গেছেন। এর মধ্যে গত বছর ১৯ হাজার ১১৮ জন এবং এ বছরের জুলাই পর্যন্ত ৮ হাজার ৮৮৫ জন লেবাননে গেছেন, যাঁদের মধ্যে ১ হাজার ১৭৬ জনই নারী। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি আছেন।
তাঁদের কল্যাণ ও নতুন করে কর্মী নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে ১০ আগস্ট জর্ডান থেকে লেবাননে পৌঁছেছেন মন্ত্রী। এ সময় বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জে লেবাননে শ্রম মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক জর্জ আইন তাঁকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। পরদিন এই বৈঠক হয়।
লেবাননের শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলের সদস্যরা প্রথম আলোকে জানান, লেবাননের শ্রমমন্ত্রী সিজান আজ্জির বলেন, বাংলাদেশি কর্মীরা এখানে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। লেবাননের জনগণ বাংলাদেশি কর্মীদের পছন্দ করে। কারণ, বাংলাদেশি কর্মীরা অনেক আন্তরিক। শ্রমমন্ত্রী লেবাননের সঙ্গে বাংলাদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, উন্নয়নশীল দেশে হিসেবে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
বৈঠকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশি কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে। পুলিশ ভেরিফিকেশন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, স্মার্টকার্ডসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় যাচাইবাছাই শেষে কর্মীদের বিদেশে যাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে নির্মাণ খাত, চিকিৎসক, নার্স, প্রকৌশলী, ইলেকট্রিশিয়ান, বিক্রয়কর্মীসহ বিভিন্ন খাতে কর্মী নেওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি বাংলাদেশিদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে বিবেচনার জন্য লেবাননের শ্রমমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। এ সময় লেবাননের শ্রমমন্ত্রী সিজান আজ্জির বলেন, বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সে দেশের আইন অনুযায়ী ধার্য করা বেতন প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। এতে প্রত্যেক কর্মীর বেতন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। লেবাননের শ্রমমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে নারী কর্মী নেওয়ার পাশাপাশি আরও বেশি পুরুষ কর্মী নেওয়ারও আশ্বাস দেন।
বৈঠকে অভিবাসন ব্যয় কমানো, দ্রুত কর্মী প্রেরণ প্রক্রিয়া নিশ্চিতকরণ, মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য বন্ধসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরে জন্য উভয় পক্ষ একমত হয়। সরকারি পর্যায়ে কর্মী প্রেরণ করা যায় কি না, তা নিয়ে সুবিধাজনক সময়ে উভয় দেশের বৈঠক হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বেগম শামছুন নাহার, লেবাননের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকার, অতিরিক্ত সচিব মো. আজাহারুল হক, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সেলিম রেজা, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস, মন্ত্রীর একান্ত সচিব মু. মুহসিন চৌধুরী ও সিনিয়র সহকারী সচিব শোভা শাহনাজ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে উভয় পক্ষে উপহার বিনিময় হয়। রাতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলামের জন্য নৈশভোজের আয়োজন করেন লেবাননের শ্রমমন্ত্রী। বৈঠক শেষে দুই দেশের মন্ত্রী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম লেবাননের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নুহাদ মাশনকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় উভয় পক্ষ নিরাপদ অভিবাসন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে।
এর আগে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম লেবাননের বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন করেন। দূতাবাস পরিদর্শনকালে মন্ত্রী বিভিন্ন কার্যক্রম ও সমস্যা সম্পর্কে অবগত হন। তিনি সমস্যাগুলো সমাধানের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দেন। দূতাবাস পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী লেবাননে জাতিসংঘ নিয়োজিত নৌবাহিনীর জাহাজ বিএনএস আলী হায়দার পরিদর্শন করেন। এ সময় মন্ত্রীকে নৌ-সদস্যরা গার্ড অব অনার প্রদান করেন। prothom-alo
0 comments:
Post a Comment