কর্মী নিয়োগ বিষয়ে এ মাসেই কাতারের সঙ্গে বৈঠক





ফিরোজ মান্না ॥ উন্নয়ন কর্মকা-ে কাতার বাংলাদেশ থেকে দক্ষ আধাদক্ষ কর্মী নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কর্মী নিয়োগের বিষয়ে এ মাসেই ঢাকায় দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এরপরই দেশটিতে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। শ্রমবাজারটিতে গত বছর এক লাখ ২৩ হাজার ৯৬৫ কর্মী নিয়োগ পেয়েছে। নতুন করে দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি চুক্তি হতে পারে। এই চুক্তি হলে আধা বন্ধ শ্রমবাজারটি পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়ে যাবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, ২০২২ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার ভেন্যু হচ্ছে কাতার। এজন্য দেশটিতে বেশ কয়েকটি স্টেডিয়াম ও বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। এই মহাকর্মযজ্ঞ শেষ করতে বিপুল পরিমাণ কর্মীর প্রয়োজন। দেশটিতে ৭ বছরের বেশি সময় জনশক্তি প্রেরণ অলিখিতভাবে বন্ধ রয়েছে। যদিও এই বাজারে দেশের কয়েক লাখ কর্মী কাজ করছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করেই শ্রমবাজারটি বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে দেশটিতে স্বাভাবিক কর্মী নিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছিল না। পরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কাতার সফরে যান। ওই সময় তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী আব্দুল্লাহ বিন নাসের বিন খলিফা আল থানি ও প্রশাসনিক উন্নয়ন, শ্রম ও সমাজ কল্যাণমন্ত্রী ড. ঈসা সাদ আলজাফালি আল নুয়াইমির সঙ্গে বৈঠকে করেন। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় দুই দেশের ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কতসংখ্যক কর্মী বাংলাদেশ থেকে নেয়া হবে। এরপর বেশ কয়েক মাস চলে গেছে। দুই দেশের মধ্যে আর কোন বৈঠক হয়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কাতারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা হচ্ছিল। তারই ফলে এ মাসে দুই দেশের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হচ্ছে।

কাতার সফরের সময় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসির কাছে কাতারের প্রধানমন্ত্রী জানতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশে কত ভাগ মুসলিমের দেশ। বাংলাদেশের ৯৫ ভাগই মুসলিম বলে জানানো হয়। তখন তারা বলেছেন, তোমরা আমাদের ভাই। তোমাদের দেশ থেকে অধিক সংখ্যক দক্ষ ও আধাদক্ষ কর্মী নিতে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তাই তোমাদের কর্মীদের নিতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। ওই সময় মন্ত্রী বলেন, শুধু তাই না, বাংলাদেশ জঙ্গী দমনে জিরো টলারেন্স দেখিয়ে যাচ্ছে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী আব্দুলাহ্ বিন নাসের বিন খলিফা আল থানি বাংলাদেশী কর্মীদের দক্ষতা ও কাজের আন্তরিকতার প্রতি প্রশংসা করেছেন।

২০১৫ সালে এক লাখ ২৩ হাজার ৯৬৫ জন কর্মী নিয়োগ দিয়েছে কাতার। ২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিতব্য ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ চলছে। এ জন্য দেশটিতে নির্মাণকর্মী, সেবা খাত ও বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আগামী দুই বছরে তিন লক্ষাধিক কর্মী নিতে পারে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এসব কর্মী নিতে এ মাসেই ঢাকায় উভয় দেশের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। দক্ষ ও আধাদক্ষ কর্মী নিতেই দেশটির আগ্রহ রয়েছে। কাতারের প্রশাসনিক উন্নয়ন, শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশ থেকে শুধু নির্মাণ কর্মীই নেবে না। বিক্রয়কর্মী, নার্স, ডাক্তার, প্রকৌশলী ও অফিস কর্মচারীসহ সব খাতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে চান। বেতন-ভাতা এবং অভিবাসন ব্যয় কেমন হবে সেটা উভয় দেশের যৌথ কমিটি বসেই ঠিক করবে। দেশটিতে বর্তমানে ন্যূনতম বেতন ৭শ’ রিয়াল, তা বৃদ্ধি করে ১২শ’ রিয়াল করারও প্রস্তাব করা হয়েছে। ২ থেকে ৩ লাখ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কর্মী নিয়োগ করার বিষয়ে যৌথ কমিটির বৈঠকে একটি সমঝোতা চুক্তি হতে পারে। কাতারের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর ও উভয় পক্ষের মধ্যে বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ বিষয়ে কারিগরি পর্যায়ে সুযোগ সুবিধা দেয়ার জন্য ইতিবাচক ভূমিকা থাকবে।

সূত্র জানিয়েছে, দেশটির প্রশাসনিক উন্নয়ন ও শ্রম সমাজ বিষয়ক মন্ত্রী ড. ইসা আল-জাফালি আল-নুয়াইমির বলেছেন, আগামী ২ বছরে ৩ লক্ষাধিক কর্মীর প্রয়োজন হবে তাদের। বর্তমানে কাতারে বাংলাদেশী কর্মীরা নির্মাণ ও পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে কাজ করছে।
Share on Google Plus

About Jessica Hornberger

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment