কুয়েতে যেসব দেশের প্রবাসীদের জন্য পারিবারিক স্পন্সর ও ভ্রমণ ভিসার অনুমতি আছে তাদের জন্য নতুন শর্ত দিয়েছে দেশটির সরকার। কুয়েতে স্পন্সরের মাধ্যমে স্ত্রী-সন্তান আনার ক্ষেত্রে নতুন শর্তে একজন প্রবাসীর মাসিক বেতন হতে হবে ৪৫০ কুয়েতি দিনার । এর আগে কোন কুয়েত প্রবাসীর মাসিক বেতন ২৫০ কুয়েতি দিনার হলেই তিনি তার স্ত্রী-সন্তানকে স্পন্সর করে কুয়েতে নিতে পারতেন।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে কুয়েতের ইন্টেরিয়র মন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আল খালিদ আল সাবাহ এর বরাত দিয়ে এই সংবাদটি প্রকাশিত হয়। রিপোর্টে বলা হয়, কুয়েতের মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের দুই ভাগই বিদেশী নাগরিক। সব মিলিয়ে কুয়েতে প্রায় ৩৩ লাখ বিদেশী নাগরিক বাস করেন। কুয়েতে বসবাসকারী প্রবাসী পরিবারগুলোর সংখ্যা কমিয়ে ফেলাই নতুন শর্তের উদ্দেশ্য।
কুয়েতের আইন অনুযায়ী, কোন বিদেশী নাগরিক যদি কুয়েত কাজ করে এবং তার রেসিডেন্সি পারমিট থাকে তাহলে তিনি তার স্ত্রী, সন্তান অথবা তার উপর নির্ভরশীল পরিবারের বয়স্ক সদস্যকে স্পন্সর করে কুয়েতে নিজের কাছে রাখতে পারবেন। প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানদের কুয়েতে নেয়ার অনুমোদনের ব্যাপারটি নির্ভর করছে তার মাসিক বেতন বা উপার্জনের উপর। মুলত পরিবারকে কুয়েতে নিয়ে নিজের কাছে রেখে ভরণপোষণ চালানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য যার আছে তাকেই অনুমোদন দেয়া হয়। ২০০৪ সালে এই শর্ত শিথিল করে ২৫০ কুয়েতি দিনার করা হয়েছিল। এর ফলে কুয়েতে প্রবাসী পরিবারের সংখ্যা খুব দ্রুত গতিতে বেড়ে যায়। এটা হ্রাস করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে যেসব প্রবাসী আগে থেকেই কুয়েতে বসবাস করছে অথবা কুয়েতে জন্ম নিয়েছে কিন্তু মাসের ৪৫০ কুয়েতি দিনারের চেয়ে কম উপার্জন করে তাদের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এ বিষয়টি দেখার জন্য কুয়েতের আবাসন বিভাগের মহাপরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে কুয়েতে ভিজিট ভিসার নতুন শর্ত দিয়েছে দেশটির সরকার। পরিবারের সদস্যদের কুয়েতে আনার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন মাসিক বেতন সীমা বেঁধে দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই এই নতুন শর্ত যোগ হওয়ার আরেকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই নতুন শর্তে বলা হয়েছে, কুয়েতে বসবাসকারী কোন বিদেশী নাগরিক যদি তার স্ত্রী-সন্তান বা পিতা-মাতার জন্য ভিজিট ভিসা ইস্যু করাতে চায় তাহলে তার সর্বনিম্ন মাসিক বেতন হতে হবে ২০০ কুয়েতি দিনার।
কুয়েতের ইন্টেরিয়র মন্ত্রণালয়ের আবাসন বিভাগের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল তালাল মারাফি বরাত দিয়ে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে। স্ত্রী-সন্তান বা পিতা-মাতার জন্য ভিজিট ভিসা ইস্যু করতে হলে আগে কুয়েত প্রবাসীদের মাসিক সর্বনিম্ন বেতন ১৫০ কুয়েতি দিনার হলেই হতো। এখন ২০০ কুয়েতি দিনার হতে হবে। একই সাথে কুয়েতি বসবাসকারী কোন বিদেশী নাগরিক যদি তার কোন ভাই-বোন বা অন্য আত্মীয়-স্বজনের জন্য ভিজিট ভিসা ইস্যু করাতে চায় তাহলে ঐ প্রবাসীর মাসিক সর্বনিম্ন বেতন হতে হবে ৩০০ কুয়েতি দিনার। আর যাদের জন্য ভিজিট ভিসা ইস্যু করা হবে তাদের বয়স ৫০ বছরের বেশি হতে পারবে না।
ভিজিট ভিসায় কুয়েতে আসার পর কোন প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তান ৩ মাস পর্যন্ত থাকতে পারবে। আর অন্য আত্মীয়-স্বজন ১ মাসের বেশি থাকতে পারবে না। রিপোর্টে এসব পদক্ষেপের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ইন্টেরিয়র মন্ত্রণালয়ের আবাসন বিভাগের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল তালাল মারাফি বলেছেন, কুয়েতে ২৬ লাখ ৭০ হাজার বিদেশী নাগরিক বসবাস করে। যদি এসব পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে এই সংখ্যা পরবর্তী কয়েক বছরে দ্বিগুণ হয়ে যাবে- যা বড় ধরণের সমস্যা তৈরি করবে বলে ধারনা করছেন। কুয়েতের আইন অনুযায়ী শুধুমাত্র পুরুষ প্রবাসীই তার পরিবারের সদস্যদের স্পন্সর করতে পারে। আর স্বামীর মৃত্যু হলে তখন কোন কর্মজীবি প্রবাসী নারী তার সন্তানদের স্পন্সর করতে পারবে যদি তার সর্বনিম্ন মাসিক উপার্জনের শর্ত ৪৫০ কুয়েতি দিনার পূরণ হয়। তবে মানবিক কারণে কোন কোন ক্ষেত্রে এ আইন শিথিল হতে পারে।
কুয়েতে পূর্বের তুলনায় বাসা ভাড়া, খাওয়া দাওয়া, যাতায়াত, পড়ালেখার খরচ বেড়ে গেছে বহুগুণ। এই খরচ সামাল দিতে না পেরে মধ্য ও নিম্ন আয়ের অনেক প্রবাসী এরই মধ্যে তাদের পরিবারকে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আর যারা নতুন করে তাদের পরিবারকে কুয়েত আনতে আগ্রহী তারা অনেকেই জানেন না বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে ভিসা খোলা নাকি বন্ধ।
তবে কিছু প্রবাসী বিশেষ অনুমতি নিয়ে তাদের পরিবার কুয়েতে নিয়ে আসেন। এই বিষয়ে কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের এইচ.ও.সি আনিসুজ্জামান এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, 'বিষয়টি সম্পর্কে পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি।' আমাদের পার্শ্ববর্তি দেশ থেকে কোন শ্রমিক বা পরিবার আনতে কোন বিশেষ অনুমতি লাগে না অথচ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কেন লাগে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কুয়েত সরকার বিভিন্ন দেশের ভিসার জন্য কিছু শর্ত দিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ও আছে। তবে কুয়েতে বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা বন্ধ নেই। শর্ত মেনে নিয়ম অনুযায়ী বিশেষ অনুমতি নিয়ে কুয়েতে শ্রমিক বা পরিবার আনতে পারবেন। কুয়েতে সকল ভিসার ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের জন্য বিশেষ “লামানা” প্রয়োজন হয়। এসব সমস্যার সঠিক সমাধানের জন্য দূতাবাস কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছেন। তবে স্থানীয় আইনে থাকলে অন্য দেশের সেখানে কিছু করার থাকেনা।
বিডি প্রতিদিন/২১ অক্টোবর ২০১৬/হিমেল
0 comments:
Post a Comment