ফোনে কথা
হচ্ছিল, সুদানের
খার্তুমে জাতিসংঘের একটি সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি এক কর্মকর্তা জনাব শাহীনের
সঙ্গে। নিজ দায়িত্বের বাহিরে তিনি সময় পেলেই জেলে আটকেপড়া এসব বাঙালিদের খোঁজ-খবরে
ব্যস্ত থাকেন।
তাঁর
ভাষ্যমতে, বাংলাদেশি
কিছু দালালের একটা অংশ থাকে বাংলাদেশে, আরেকটা অংশ
সুদানে। দেশীয় দালালরা লিবিয়া, মিশর ইত্যাদি দেশে পাঠানোর নাম করে ৫-১০ লাখ
টাকার চুক্তিতে মানুষের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে।
পাসপোর্টের
ফটোকপি পাঠিয়ে দেয় সুদানে বাংলাদেশি দালালদের কাছে। তারা সেখানে সুদানের কিছু
অসাধু কম্পানির সাথে চুক্তিতে চাকরির নামে স্টিকার ভিসা বের করে। মূলত:
কম্পানিগুলোতে চাকরির কোনো ব্যবস্থা নেই। কম্পানির চুক্তিমতে, তারা
প্যাসেঞ্জারদের এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে দালালদের হাতে দিয়ে দেবে এবং
পাসপোর্ট-ভিসা জব্দ করে নিয়ে যাবে। কারণ কোনো কারণে যদি সুদানী পুলিশ
প্যাসেঞ্জারদের পাসপোর্ট-ভিসা পায়, তবে এসব কম্পানির চাকরির দেয়ার নাম করে ভিসা
বের করার চুরি ধরা পড়ে যাবে। তাতে কম্পানি লাইসেন্স হারাবে এবং শাস্তিপ্রাপ্ত হবে।
শাহীনের
মতে, সাধারণতঃ
চট্টগ্রাম থেকে প্যাসেঞ্জারদের ফ্লাইট করানো হয়। সুদানের রাজধানী খার্তুম
এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশনের পর ওসব কম্পানি প্যাসেঞ্জারদের রিসিভ করে পাসপোর্ট-ভিসা
নিয়ে যায়। আর এদিকে দালালরা পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া প্যাসেঞ্জারদের খার্তুমে ছেড়ে দিয়ে
বলে, তোমরা
কয়েকদিন লুকিয়ে-সুকিয়ে এখানে কাজ করো, তোমাদের
লিবিয়া বা মিশরের ভিসার ব্যবস্থা করতেছি; যেটা আসলে
সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত ভাওতাবাজি।
কয়েকদিন পর
এই দালালরাই পুলিশে ইনফরমেশন দিয়ে অবৈধ প্রবাসীদের পুলিশে ধরিয়ে দেয়। প্রবাসীদের
কোর্টে নেয়া হলে জনপ্রতি প্রায় ৫শ’ ডলার জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে তাদের
তিন থেকে চার মাস জেল খাটতে হয়। তারপরও নিস্তার নেই। কেবল বিমানের টিকেটের অর্থ
দেশ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে নিয়ে ম্যানেজ করে দিতে পারলেই জেল থেকে নিয়ে তাদের সাদা
কাগজে বাংলাদেশি বলে এক্সিট সিল দিয়ে বিমানে তুলে দেয়া হয়।
কিন্তু
পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া যে কোনো অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে দেশে ফেরার আগে
বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে এনওসি দেয়ার অথরিটি কেবল বাংলাদেশ এম্বেসি সংরক্ষণ
করে। অথচ সুদানে বাংলাদেশ এম্বেসি না থাকায় সুদানী পুলিশ এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে
পারে না। আবার এরা বাংলাদেশি কি-না এ সার্টিফিকেটও সুদানী পুলিশ দিতে পারে না। এ
ধরনের সুযোগ দেয়া হলে অন্য দেশের নাগরিকও বাংলাদেশে ঢুকে যেতে পারে, বা
পাঠিয়ে দিতে পারে। সঙ্গতকারণে বাংলাদেশে আসার পর বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনও পড়ে বিপাকে।
আইনতঃ তারা প্যাসেঞ্জারদের বাংলাদেশে ঢুকতে দিতে পারে না, ফেরত
পাঠাতে হয়।
শাহীনের
মতে, সুদানে
বাংলাদেশ এম্বেসি না থাকলেও সুদানের এসব কার্যক্রম দেখাশোনার দায়িত্ব সৌদির রিয়াদে
বাংলাদেশ এম্বেসির। তিনি রিয়াদ এম্বেসির সাথে বহুবার ফোনে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন।
এম্বেসির সাজেশন মতে জনাব শাহীন বর্তমানে জেলখানার প্রায় দেড়-দু'শো
বাংলাদেশির ন্যাশনাল আইডি, ভোটার আইডি দেশ থেকে আনিয়ে এম্বেসিতে মেইল
করলেও অদ্যাবধি তেমন কোন অগ্রগতি নেই। এম্বেসির লিগাল কর্মকর্তা তাঁকে বলেছেন যে, এ
কাগজগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যাচাই করে তারপর জানানো হবে। কবে নাগাদ
হবে, সে
বিষয় যদিও এখন পর্যন্ত অস্পষ্ট থেকে যাচ্ছে। রিয়াদের বাংলাদেশ এম্বেসি থেকে এ
পর্যন্ত কেউ বিষয়টি সুরাহা করতে আসেননি মর্মেও জানান শাহীন।
তীব্র
ক্ষোভ প্রকাশ করে শাহীন বলেন, কেবল খার্তুমেই ৫ হাজারের বেশি বাঙালি অবৈধ
প্রবাসী রাস্তাঘাটে মানবেতর জীপন যাপন করতেছেন। প্রতিনিয়ত পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে
জেলে ভরছে, কিন্তু
কোনো কুল কিনারা হচ্ছে না। শাহীনের মতে, দেশীবিদেশী
এ দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য বন্ধ না করতে পারলে এ অবস্থার স্থায়ী কোন সমাধান আসবে
না।
শাহীনের
সাথে কথা বলে কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন শাহজালাল এয়ারপোর্টের
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ। kalerkonto
0 comments:
Post a Comment