ভারতীয় ই-ভিসার সুবিধা থেকে আবারও বাদ পড়লো বাংলাদেশ




প্রায় সারা দুনিয়ার পর্যটকের জন্য ভারত ই-ভিসার সুবিধা সম্প্রসারিত করলেও বাংলাদেশকে আবারও সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হলো। চলতি সপ্তাহে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা নতুন আরও আটটি দেশের জন্য ই-ভিসার সুবিধা সম্প্রসারিত করেছে। পর্যটন ছাড়া আরও নানা খাতে ই-ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের নাম এবারেও সেই তালিকায় নেই।

অথচ সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, আমেরিকার পর বাংলাদেশ থেকেই সব চেয়ে বেশি সংখ্যক বিদেশি নাগরিক ভারতে যান। গত বছর ১৩ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি ভিসা নিয়ে ভারতে গিয়েছেন। এ বছর সংখ্যাটা আরও অনেক বাড়বে বলেই অনুমান করা হচ্ছে। কিন্তু সেই ভিসা জোগাড় করার জন্য তাদের শোচনীয়ভাবে নাজেহাল হতে হয়, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তাদের এই ভোগান্তির সবচেয়ে সহজ সমাধান হতে পারে ই-ভিসা, কিন্তু ভারত এখনও তা কিছুতেই বাংলাদেশকে দিতে রাজি হচ্ছে না।

দিল্লির এই মনোভাবের স্পষ্ট প্রতিফলন দেখা গেছে গত বুধবার ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে। যেখানে সভাপতিত্ব করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই বৈঠকেই প্রস্তাব আনা হয়েছিল যে, ভারত এই মুহূর্তে যে ১৫০টি দেশের নাগরিকের জন্য ই-ট্যুরিস্ট ভিসা সুবিধা দিয়ে থাকে, তার পরিসরকে আরও বাড়ানো হোক। অর্থাৎ শুধু পর্যটন নয়, ব্যবসায়িক কাজকর্ম, চিকিৎসা বা কোনও কনফারেন্সে যোগ দিতে যারা ভারতে যাবেন, তাদেরও ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে ভিসা মঞ্জুর করা হোক। সোজা কথায়, ই-ট্যুরিস্ট ভিসার বদলে কার্যত তা হয়ে উঠবে ই-ভিসা।

এতেই শেষ নয়, ই-ভিসার সুবিধা শুধু ১৫০টি দেশের জন্য আটকে না রেখে আরও আটটি দেশকে সেই সুবিধা দেওয়ার জন্য প্রস্তাব এনেছিলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই সব প্রস্তাবই অনুমোদিত হয়েছে। কিন্তু লাখ-লাখ বাংলাদেশিকে হতাশ করে সেই নতুন আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নাম রাখা হয়নি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কেএম ধাতওয়ালিয়া শুক্রবার বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘যে নতুন আটটি দেশ এই সুবিধা পাবে, সেগুলো হলো অ্যাঙ্গোলা, রোয়ান্ডা, নিজার রিপাবলিক, সাইপ্রাস, ক্যামেরুন, মালি, বুরুন্ডি ও সিয়েরা লিওন। এর মধ্যে একমাত্র সাইপ্রাস ইউরোপের দেশ, বাকি সবগুলোই আফ্রিকার।’

কিন্তু কেন বাংলাদেশ এবারেও এই তালিকাতে নেই, তা নিয়ে কেএম ধাতওয়ালিয়া কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নর্থ ব্লকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদর দফতরে পদস্থ সূত্রগুলো এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন ই-ভিসার সুবিধা দেওয়ার জন্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর যে ছাড়পত্র দরকার, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা এখনও মেলেনি।

আইবি’র (ইন্টিলেজেন্স ব্যুরো) কর্মকর্তারা মনে করছেন, ই-ভিসার ক্ষেত্রে যে ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে ভিসার আবেদনে নীতিগত সম্মতি দেওয়া হয়ে থাকে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা এখনও চালু করার সময় আসেনি। বরং তাড়াহুড়ো করে করা হলে ভারতের জন্য তা ‘নিরাপত্তাগত ঝুঁকি’ হয়ে উঠতে পারে।
কিন্তু ঘটনা হলো, এখন যে ১৫৮টি দেশকে ভারত ই-ভিসার সুবিধা দিতে চলেছে, তার মধ্যে প্রায় গোটা দুনিয়াই ঢুকে পড়ছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া, আফগানিস্তানের মতো মাত্র কয়েকটি দেশ আছে এই তালিকার বাইরে। আর অবশ্যই আছে পাকিস্তান, যাদের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক সব চেয়ে খারাপ।

ফলে ই-ভিসার ব্যাপারে এসে ভারত সেই পাকিস্তান আর বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশকে এক ব্র্যাকেটে ফেলে দিচ্ছে, যেটা ঢাকা-দিল্লি কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য খুব ভালো ইঙ্গিত নয়। নেপাল-ভুটানও অবশ্য এই ১৫৮ দেশের তালিকায় নেই। কিন্তু ওই দু’টি দেশের নাগরিকদের ভারতে যাওয়ার অন্য সহজ রাস্তা আছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা মাত্র দুদিন আগেই ঢাকা-কলকাতার মধ্যে নতুন একটি বিমান পরিষেবার উদ্বোধন করতে গিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া আগামী দিনে সহজ করা হবে। এমনকি, বাংলাদেশি নাগরিকদের দীর্ঘমেয়াদি ভিসা দেওয়ার পরিকল্পনাও ভারতের রয়েছে বলে তিনি সেই অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন। হাইকমিশনার যখন এ কথা বলেন, তার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই কিন্তু দিল্লিতে ই-ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাম নতুন তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেছে।

মোটামুটি সারা পৃথিবীতেই এখন এটা স্বীকৃত যে, ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে ই-ভিসাই সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। আমেরিকা থেকে শ্রীলঙ্কা—সব দেশই এই পদ্ধতি অনুসরণ করে সাফল্য পেয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভারতও যতদিন না বাংলাদেশের জন্য ই-ভিসা চালু করছে, ততদিন লাখ-লাখ বাংলাদেশির জন্য ভারতে যাতায়াত কিছুতেই সহজ হবে না। bdtoday


Share on Google Plus

About Jessica Hornberger

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment